তথাগত
পৃথিবীর বিষণ্ন মানুষেরা আমাকে টানে—
যেভাবে সলজ্জভঙ্গিতে ফুল ছড়িয়ে যায় ঘ্রাণ
খুব গভীরে যেন রূপান্তরিত শিলায় ফুটে ওঠে রঙ!
অনেক দূরের থেকে সিগনাল ভেসে আসে
অজানা বনের দেশে মধুবন্তী রাগ, সারি সারি
নৌকার ঘাট—রাতের শহরে শুধু মোমবাতি জ্বলে।
ধুলো আর পথ—হেডফোনে কখনোবা ডেনভার বাজে—
এইসবকিছু নিয়ে এইসবকিছু ফেলে দূরত্ব শুধু দূরত্ব
এভাবে আমাকে টানে অমীমাংসা—
বোহেমিয়ান অসুখ-জীবন!

বন্ধুর জন্য এলিজি
অদ্ভুত ভ্রমে এসে একদিন ধরা দিল
ইতিহাস আর ভবিষ্যতের যুগল ভ্রমণ—
বন্ধনের ভেতরে যেটুকু ফাঁকা থাকে
সেখানে আমরা রাখি নিজেদের;
কল্যাণ-বিমর্ষতার একান্ত মৃত্যুঞ্জয় ফুল!
অব্যক্ত ভাষার ভেতরে বেঁচে থাকে
যে নামসংকীর্তন
তার অভিন্ন গভীরে আমরা একে-অন্যকে
ছুঁয়ে হারিয়ে যাচ্ছি আশূন্য মৃয়মান দিনে!
সমস্ত নিরর্থকতা স্বীকার করে নিয়ে
আবার বানাতে শুরু করেছি নিজেকে।
জীবনের যাবতীয় রক্তমাংসের পরে,
ঘৃণা ও ক্লেদের পরে, সন্ধ্যামণি ফুল
ফুটে ওঠে—সেখানে নিজেকে নিয়ে যাই,
নিয়ে যাই একটা নির্জন বন্ধুর দিকে!
এভাবে নিজেকে গড়তে গড়তে
লিখতে শুরু করি বন্ধুর জন্য এলিজি;
হয়তো বন্ধুত্ব একটা ভ্রম জেনেই
পৃথিবী তার নিজস্ব গতিতে ঘোরে—

সলিচ্যিউড
তোমাকে
বলবার মতো কথা না-থাকাই ভালো—
গ্রিলের একপাশে ভাবি—বনকুয়াশার নীলে
একদিন ভরে যাবে সমস্ত শহর,
ছোট ছোট ফুলে ছেয়ে থাকবে বিস্মৃত
ছবির এলবাম—একাগ্র প্রার্থনায়—
তিন ভাগ জল দিয়েও বাঁচানো যায়নি যে মাছ
তারই উদ্দেশ্যে
ভেসে যাবে নিজস্ব অর্থহীন কথোপকথন!

পাথরকুচি
মৃত্যুর কাছেই জমা রেখে জীবন
অপেক্ষামঞ্জুরী ঝরে প’ড়ে সন্ধ্যালোকে—
স্মৃতির বিষণ্ন ম্যাজিক ভুলে পাথরকুচি ফুল
বাতাসে দোল খায়; ছোট ছোট হাওয়ার চুমো
বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে—
সন্ধ্যার পাখিরা ওড়ে, কখনো বা আকাশের সাথে
হয় তাদেরও বিচ্ছেদ— তখন মাটিতে মায়া
পাখিদের মৃতদেহ সবার অজানা!
এরচেয়ে অধিক কোনো শব্দের ভেতরে
একটি বিন্দুতেই বৃত্ত ঘুমায়—
জীবন, ক্রমশ পেঁকে ওঠা ফসলের মাঠে
একা হাসে একা কথা বলে! নির্লিপ্ত;
নিরুপায়—

কুর্চি ফুলের হাওয়া
না-হয় কুর্চি ফুলের বন থেকেই হাওয়া আসুক—
আমি তো কল্পনাতেই রঙ দেখে নিই,
মাথা নীচু করে পায়ের দিকে চেয়ে হাঁটি পথ!
এমন স্বভাবে আরও একা হওয়ার সুরে
কল্পনার কাছেই থাকে সমস্ত আশ্রয়—
না-হয় একটা আশ্বিনের বিকেলের কথা ভেবে জানালায় গোপনে নীল সমুদ্র খুলে বসি, দূরে
ফেলে আসা বিশালাক্ষীর মন্দিরে দেবীও যে একা—
সেই কথা ভেবে আজো বিষণ্ণ হয় চোখ।
একটা হাওয়া আসুক, শূন্য থেকে ওলোট-পালোট
হয়ে যাক সব—সূত্র মেনে তোমাদের এই
নির্ভুল বেঁচে থাকা!

লেখক:
শ্বেতা শতাব্দী এষ, ‘আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ এবং তরুণ কবি ক্যাটাগরিতে ‘আদম সম্মাননা ২০১৮’ প্রাপ্ত কবি