সবার পিছে, সবার নীচে সব-হারাদের মাঝে

Comments

সন্দীপ দে 

কর্ম উপলক্ষে বাংলা পল্লীগ্রামের নিকট-পরিচয়ের সুযোগ আমার ঘটেছিল। পল্লীবাসীদের ঘরে পানীয় জলের অভাব স্বচক্ষে দেখেছি,রোগের প্রভাব ও যথোচিত অন্নের দৈন্য তাদের জীর্ণ দেহ ব্যাপ্ত করে লক্ষগোচর হয়েছে। অশিক্ষায় জড়তাপ্রাপ্ত মন নিয়ে তারা পদে পদে কিরকম প্রবঞ্চিত ও পীড়িত হয়ে থাকে তার প্রমাণ বার বার পেয়েছি। সেদিনকার নগরবাসী ইংরেজি-শিক্ষিত সম্প্রদায় যখন রাষ্ট্রিক প্রগতির উজান পথে তাঁদের চেষ্টা-চালনায় প্রবৃত্ত ছিলেন তখন তাঁরা চিন্তাও করেন নি যে জনসাধারণের পুঞ্জীভূত নিঃসহায়তার বোঝা নিয়ে অগ্রসর হবার আশার চেয়ে তলিয়ে যাবার আশঙ্কাই প্রবল।”

Rabindranath Thakur

১৯৩৮ সালে শ্রীনিকেতন শিল্পভাণ্ডার উদ্বোধনের  অভিভাষণে রবীন্দ্রনাথ উপরোক্ত যে কথাক’টি উচ্চারণ করেছিলেন তা ছিল তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা-সঞ্জাত আন্তরিক উপলব্ধি। তিনি ছিলেন বিশ্ববরেণ্য কবি, সংগীত স্রষ্টা, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী ইত্যাদি বহুগুণ সমন্বিত এক অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তি। এই বিপুল সৃষ্টি-কর্মের পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ সময় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি পরিচালনা করেছেন এবং মানসভূমি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেইসঙ্গে শ্রীনিকেতনের ঊষর ভূমিতে শিল্পকেন্দ্র স্থাপনের মতো কর্মোদ্যোগে মগ্ন থেকেছেন। তবুও তাঁর অফুরান সৃষ্টি ও কর্মময় দীর্ঘ জীবনের দিকে আলোকপাত করলে আরও একটি নতুন দিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে এবং বিস্ময়ের সঙ্গে আরেকটি ধারণারও সৃষ্টি করে তা হলো– রবীন্দ্রনাথ বহুধা-বিস্তৃত জীবনের বিভিন্ন পর্বে জমিদারির কাজে বার বার যে পল্লিজননীর কোলে আশ্রয় নিয়েছেন এবং উন্মুক্ত গ্রামীণ পরিবেশে বিপুল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে গ্রামের বহুদিনের বঞ্চিত গরিব- অন্ত্যজ -নিরক্ষর মানুষের জীবনে সাধ্যমতো আলোক সঞ্চারে, তাদের মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফোটাতে যে আন্তরিক প্রচেষ্টা তিনি নিয়েছিলেন, তা তাঁর অনন্ত শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টির ভুবন থেকে কোনো অংশে কম নয়। বরং তাঁর শুভ্রশ্মশ্রুশোভিত আলখাল্লা পরা কবি,দার্শনিক অথবা ঋষিমূর্তির আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকা সবহারা মানুষের  কল্যাণে ব্রতী এক অনন্যসাধারণ কর্মোদ্যোগী, তাঁদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ও চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের রূপকেই সামনে তুলে ধরে। এ প্রসঙ্গে অমিতাভ চৌধুরী তাঁর সম্পর্কে যথার্থই লিখেছেন:

‘এই অনন্য চরিত্র নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাই আমার বার বার মনে হয়েছে — কবি নয়,সংগীতজ্ঞ নয়,দার্শনিক নয়, যেন একজন হৃদয়বান কর্মযোগী হওয়ার জন্যই রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আর সাহিত্য-সংগীত ইত্যাদি জমিদারি পরিচালনার ফাঁকে উপজাত সৃষ্টি।’ (‘জমিদার রবীন্দ্রনাথ’,পৃষ্ঠা-৪)

দেশ-বিদেশের কাব্য-সাহিত্যের অঙ্গনে অনেকের কথাই আমরা স্মরণে আনতে পারি যাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে তাঁদের সৃষ্টিতে স্বপ্ন রচনা করেছিলেন এক সৌন্দর্যময় আদর্শলোকের, সুখী-সমৃদ্ধ এক মুক্ত মানব সমাজের। কিন্তু সেই স্বপ্ন ও ঈপ্সিত সমাজকে বাস্তবে রূপদান করতে রবীন্দ্রনাথের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ক’জনকে আর দেখা গেছে! এখানেই বিশ্বকবির অনন্য বৈশিষ্ট্য, সম্ভবত তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত। এটা সম্ভব হয়েছিল এ কারণেই যে, তিনি শুধু রোমান্টিক কবি হিসেবে কল্পলোকের বাসিন্দা ছিলেন না, নগর ও পল্লিজীবনে মানুষের সংলগ্নতায় মাটি ছুঁয়ে থেকেই  কঠোর বাস্তবকে জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেই বাস্তবের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিবন্ধকতাকে পদে পদে জয় করেই তিনি অগ্রসর হয়েছিলেন মানব কল্যাণে তাঁর স্বপ্ন সফল করার ধ্রুব লক্ষ্যে। তাই তাঁকে আমরা দেখি কাব্য-সাহিত্য-শিল্প সৃষ্টির পাশাপাশি বহুমুখী কর্ম প্রচেষ্টায় নিমগ্ন হতে। তাঁর প্রথম যৌবন থেকেই এই ভূমিকা আমরা লক্ষ করি।

রবীন্দ্রনাথ যখন আদি ব্রাহ্ম সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন (আশ্বিন, ১২৯১) তখন তাঁর বয়স মাত্র বাইশ বছর পাঁচ মাস। তখন একটি বিশেষ সভায় (১৬ অগ্রহায়ণ, ১২৯১) এই তরুণ সম্পাদকের আগ্রহে গৃহীত হয় দু’টি প্রস্তাব–অনাথ হিন্দু বিধবাদের সাহায্য হিসেবে মাসিক ২৫ টাকা দানের প্রতিশ্রুতি এবং বীরভূমে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্যে ত্রাণের কাজ শুরু করার উদ্যোগ। প্রসঙ্গত, পরপর দু’বছর অনাবৃষ্টির ফলে তখন বাঁকুড়া, বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় দুর্ভিক্ষের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। তখন সরকারি সাহায্য ছিল অপ্রতুল। তাই রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে আদি ব্রাহ্মসমাজ বীরভূমের দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের সংকল্প গ্রহণ করেছিল।

কাব্যের ভুবন থেকে মৃত্তিকা-ভুবনে

অবিভক্ত বাংলার মধ্য ও উত্তর অঞ্চলে ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ছিল নদীয়া, পাবনা ও রাজশাহী জেলায়। নদীয়া জেলার বিরাহিমপুর পরগনার সদর কাছারি শিলাইদহ, পাবনা জেলার ইউসুফশাহি পরগনার ডিহি সাজাদপুরের সদর সাজাদপুর এবং রাজশাহী জেলার কালীগ্রাম পরগনার সদর ছিল পতিসর গ্রামে। এছাড়াও অন্যান্য স্থানে বিস্তৃত ছিল তাঁদের জমিদারি। এই সমস্ত জমিদারি ছিল রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের অর্জন। তাঁর বিষয়বুদ্ধি ছিল প্রখর। জমিদারি ছাড়াও শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি বিভিন্ন দিকে ছিল তাঁর উৎসাহ এবং তৎপরতা। পূর্ববঙ্গের এই তিনটি জমিদারির একটি থেকে অপরটির দূরত্ব ছিল অনেকটাই। বিশাল জলভাগ এগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। তাই যাতায়াতের প্রধান উপায় ছিল জলযান অর্থাৎ বোট বা নৌকা। যেমন পদ্মাকে নিয়ে শিলাইদহ, কিছুটা দূরে যমুনাকে নিয়ে সাজাদপুর, আবার আত্রাই পেরিয়ে নাগর নদীর তীরবর্তী পতিসর। রবীন্দ্রনাথের মধ্য ও উত্তরবঙ্গের স্বল্পকালীন জীবন ব্যাপৃত থেকেছে এই সমস্ত নদী ও জলরাশিকে ঘিরে,যার সাক্ষ্য মিলবে ছিন্নপত্রাবলী-র পাতায় পাতায়,মিলবে এসবের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দুর্বার আকর্ষণের পরিচয়।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর তত্ত্বজ্ঞান চর্চা, ব্রাহ্মধর্ম সাধনায় মগ্ন থেকেও পরিবার প্রতিপালন ও জমিদারির কাজ দক্ষ হাতে পরিচালনা করেছেন। পরে চেয়েছিলেন তাঁর বিষয় সম্পত্তির পরিচালনার ভার ছেলেদের মধ্যে কারও হাতে তুলে দিতে। কিন্তু বড়ো ছেলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন দর্শনচিন্তা ও লেখাপড়ায় এতটাই মগ্ন যে বৈষয়িক কাজে তাঁর মন ছিলনা, সত্যেন্দ্রনাথ সিভিলিয়ান হিসেবে বাইরে কর্মরত, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গান-বাজনা, নাট্যচর্চা ও ছবি আঁকায় বিভোর, দায়িত্ব নিয়েও জমিদারির কাজ দেখাশোনায় মন নেই তাঁর। অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তেই সবার ছোটো কবি রবীন্দ্রনাথের ওপর এই দায়িত্ব অর্পণ করলেন দেবেন্দ্রনাথ। অবশ্য প্রথমেই জমিদারি পরিচালনার এই বিরাট দায়িত্ব তিনি পাননি। প্রথমে দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে দিয়েছিলেন তদারকির ভার। সেই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে সমগ্র সম্পত্তির সর্বময় কর্তৃত্ব কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথের উপর ছেড়ে দেন দেবেন্দ্রনাথ। সেই সময়ে পুত্র রবিকে লেখা দেবেন্দ্রনাথের একটি চিঠি প্রণিধানযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের মাত্র দু’দিন আগে (২২ অগ্রহায়ণ, ১২৯০) লেখা একটি চিঠিতে দেবেন্দ্রনাথ পুত্রকে নির্দেশ দেন:

এইক্ষণে তুমি জমিদারীর কার্য্য পর্য্যবেক্ষণ করিবার জন্য প্রস্তুত হও; প্রথমে সদর কাছারিতে নিয়মিতরূপে বসিয়া সদর আমিনের নিকট হইতে জমা ওয়াশিল বাকী ও জমাখরচ দেখিতে থাক এবং প্রতিদিনের আমদানি রপ্তানি পত্র সকল দেখিয়া তার সারমর্ম্ম নোট করিয়া রাখ। প্রতি সপ্তাহে আমাকে তাহার রিপোর্ট দিলে উপযুক্ত মতে তোমাকে আমি উপদেশ দিব এবং তোমার কার্য্যে তৎপরতা ও বিচক্ষণতা আমার প্রতীতি হইলে আমি তোমাকে মফঃস্বলে থাকিয়া কার্য্য করিবার ভার অর্পণ করিব।”

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকে পরীক্ষা করে দেখলেন প্রায় ছ’বছর। তারপর পুত্রের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সম্পত্তির সর্বময় কর্তৃত্ব অর্পণ করেন। রবীন্দ্রনাথ স্কুলে, ব্যারিস্টারিতে কৃতকার্য হতে না পারলেও পিতা প্রদত্ত কঠিন পরীক্ষায় কিন্তু  কৃতিত্বের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

চিরাচরিত প্রথার অবলুপ্তি

রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব পাবার পর ১৮৯১ সালে প্রথম শিলাইদহে এলেন পুণ্যাহ উৎসবে যোগ দিতে। এসেই চিরাচরিত প্রথাকে সম্পূর্ণ  অস্বীকার করলেন। প্রথমে যে বৈপ্লবিক কাজটি তিনি করলেন তা হলো আসন-বিন্যাসের ক্ষেত্রে যে জাতি ও বর্ণভেদ ব্যবস্থা ছিল তা তুলে দিলেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমল থেকেই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে সম্ভ্রম, মর্যাদা ও জাতি-বর্ণ অনুযায়ী বিভিন্ন আসনের বন্দোবস্ত ছিল। প্রথাগত নিয়ম অনুসারে হিন্দুরা বসতেন চাদর ঢাকা শতরঞ্চির উপর একপাশে, তারমধ্যে ব্রাহ্মণদের জন্য স্থান ছিল আলাদা। আর মুসলমান প্রজারা বসত চাদর ছাড়া শতরঞ্চিতে অন্য ধারে। সদর ও অন্য কাছারির কর্মচারীরাও নিজ নিজ পদমর্যাদা অনুযায়ী বসতেন ভিন্ন ভিন্ন আসনে। আর জমিদারের জন্য নির্দিষ্ট ছিল ভেলভেট মোড়া সিংহাসন। রবীন্দ্রনাথ অনুষ্ঠানে এসেই এই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলেন। এ নিয়ে নায়েব-গোমস্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর  প্রচণ্ড মতবিরোধ হলো। এমনকী তাঁরা একযোগে পদত্যাগেরও হুমকি দিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন।শেষ পর্যন্ত তাঁর আহ্বান অনুযায়ী হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব প্রজা আসনের ভেদাভেদ তুলে দিয়ে ঢালা ফরাসের উপর বসে পড়লেন। আর সিংহাসন ছেড়ে মাঝখানে বসলেন তাঁদের ‘বাবুমশাই’– রবীন্দ্রনাথ। দলে দলে আরও লোক কাছারি বাড়িতে ভেঙে পড়ল। সেদিন থেকেই ঠাকুর এস্টেটের পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে শ্রেণিভেদ প্রথা বিলীন হয়ে গেল।

কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা এবং রবীন্দ্রনাথের প্রারম্ভিক ভাষণ নতুন সমস্যা-সংঘাতেরও জন্ম দিল। দরিদ্র প্রজারা তাঁদের দুঃখ-যন্ত্রণা কিছুটা  লাঘব হবার সম্ভাবনা অনুভব করলেন,অন্যদিকে আমলা এবং সম্পন্ন মহাজনেরা টের পেয়ে গেলেন যে, তাদের একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখা আগামীদিনে কঠিন। সেই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের দিনই রবীন্দ্রনাথ  ঘোষণা করেলেন, “সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে হবে। এটাই আমার সর্বপ্রধান কাজ।” এখানে ‘সাহা’ বলতে রবীন্দ্রনাথ কোনো বিশেষ সম্প্রদায়কে বোঝাতে চাননি, ‘শেখ’ বলতেও তা নয়। তাঁর জমিদারিতে অধিকাংশ মহাজনই ছিলেন সাহা সম্প্রদায়ের হিন্দু,সেজন্যই মহাজন অর্থে তিনি ‘সাহা’ শব্দের ব্যবহার করেছেন। এছাড়া তাঁর জমিদারিতে বেশিরভাগ দরিদ্র প্রজাই ছিলেন মুসলমান। তাই ‘শেখ’ বলতে তিনি দরিদ্র প্রজাদেরই বোঝাতে চেয়েছিলেন। এই সূত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথ জমিদারি পরিচালনা করতে গিয়ে প্রথম থেকেই কায়েমি স্বার্থের যেসমস্ত জায়গায় আঘাত হেনে ছিলেন, তার সব ক’টিরই রক্ষক ছিলেন হয় হিন্দু গোমস্তা, নয় হিন্দু মহাজন বা জোতদার। সেই প্রথম তাঁরা রবীন্দ্রনাথের দৃঢ়চেতা মনোভাব আর জন কল্যাণের উদ্যোগে বিপন্ন বোধ করলেন। তাই তাঁদেরই একাংশ স্বার্থের তাগিদেই নানা ছলে বিরোধিতায় মত্ত হয়েছিলেন। আবার ঠাকুরদের জমিদারির অধিকাংশ প্রজাই ছিলেন দরিদ্র মুসলমান, তাই সমস্ত কল্যাণকর্মে সবচেয়ে উপকৃত হয়েছিলেন ওই মুসলমান প্রজারাই। তাই তাঁদের ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রতি অপার শ্রদ্ধা ও আস্থা। এমনও জানা যায় যে, কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী লোক গ্রামের উন্নয়নের কথা ভুলে গিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতিকে বয়ে এনেছিলেন জমিদারিতে। এমনও কথা উঠেছে রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম, তাই তাঁর এত মুসলমান-প্রীতি! তিনি প্রজা-পীড়ক ছিলেন এমন সর্বৈব মিথ্যা প্রচারও হয়েছে বলে জানা যায়!

Rabindranath_with Santals_edited

জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রজাদের সাথে।

এই সূত্রেই এখানে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যার মধ্যদিয়ে বর্ণ-সম্প্রদায় বা জাতি ভেদের বিপরীত, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পরিপন্থী এক চিরন্তন অনাবিল মানবপ্রেমের ভিত রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ে যে প্রোথিত ছিল, তা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এই মহৎ ভাবনাকেই তিনি তাঁর জমিদারির কাজ পরিচালনার সময়ে সমস্ত কল্যাণকর্মের পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। শাহজাদপুরে থাকার সময়ে রবীন্দ্রনাথ একটি অসামান্য কীর্তি স্থাপন করেছিলেন। যা তুলে ধরেছেন ড. মযহারুল ইসলাম তাঁর ‘শাহজাদপুরে জমিদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাফল্য’ প্রবন্ধে(দ্র: দেশ, ২৫ চৈত্র ১৩৮৯, পৃষ্ঠা ১৯-২৫)। ঘটনাটি এরকম–ড. ইসলামের পিতামহ নবীপুরের আকুল সরকার ও সম্ভ্রান্ত হিন্দু বাউল ভদ্রের কন্যা লতা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গোপনে বিয়ে করেন। বাউল ভদ্র ছিলেন মুড়াপাড়ার ব্যানার্জি জমিদারের প্রজা। তিনি জমিদারের কাছে অভিযোগ করেন যে, আকুল সরকার জোর করে তাঁর কন্যাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে বিয়ে করেছে। জমিদার ও তাঁর ম্যানেজার আকুল সরকারকে শাস্তি দিতে উদ্যত হন, অন্যদিকে আকুল সরকারও তাঁদের বাধা দিতে প্রস্তুতি শুরু করেন। এ নিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধার উপক্রম হয়। রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুরে এসেই আকুল সরকার ও লতার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই মতো রবীন্দ্রনাথ সিরাজগঞ্জের তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট এফ ও বেল শাহজাদপুরে এলে তাঁকে এ বিষয়টি জানান এবং দু’জনের প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক বিরোধের সম্ভাবনা দূর হয়। এরপর রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে  আলোচনার কথা উল্লেখ করে আকুল সরকারকে লেখেন, “তুমি নিজের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করোনি, এইটে আমার ভালো লেগেছে। সাম্প্রদায়িকতাকে আমি ঘৃণা করি। মানুষের নিকট মানুষের মর্যাদার বাড়া আর কিছু নেই। নারী পুরুষের প্রেমও এই শাসনই মেনে চলে— সে হৃদয়ের বশ, ধর্মের বা বর্ণের অনুশাসন তার বড়ো নয়। সমাজ প্রাচীর গড়ে কিন্তু হৃদয় অনায়াসেই সেই প্রাচীর অতিক্রম করতে পারে। তোমাদের সাথে আলাপ করে আমি তেমন দুটো হৃদয়ের সন্ধান পেয়েছি। শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসনকে নিজের হাতে নেবার চেষ্টা করো না। আশাকরি তোমদের যে অত্যাচারের আশঙ্কা করা গিয়েছিল তা দূরীভূত হয়েছে। তোমরা আমার সাহায্য ও সহানুভূতি সর্বদাই লাভ করবে।সুখী হও। শুভার্থী- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।”

পল্লির সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ

জমিদারির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের লক্ষ্য ছিল পল্লির সার্বিক উন্নয়ন, প্রজাদের মঙ্গল ও কল্যাণ চিন্তা। গ্রামের মানুষদের জীবন নির্বাহের প্রধান সমস্যাগুলির সমাধান অর্থাৎ খাদ্য, পানীয়, রোগমুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে গভীর ভাবনা চিন্তার পথ অনুসন্ধান এবং সেসব বাস্তবায়নে তিনি ব্রতী হলেন। এসবের পাশাপাশি কৃষি, সমবায়, শিক্ষা, চিকিৎসা, জলসংস্কার এবং হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি অটুট রাখার মতো সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকেই তাঁর কর্মপ্রচেষ্টা ও উদ্যোগ শুরু হলো। প্রথমে ১৯০৭-০৮ সালে পুরনো আমলের জমিদারির নিয়মকানুন সংস্কার করে রবীন্দ্রনাথ প্রচলন করলেন মণ্ডলী প্রথা। অর্থাৎ এই প্রথা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক পদ্ধতি। বর্তমান সময়ের পরিভাষায় যা হলো কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আঞ্চলিক বিকেন্দ্রীকরণ। সমস্ত গ্রাম নিজেদের সমস্ত প্রয়োজন যাতে নিজেরাই মেটাতে পারে সেই লক্ষেই এই মণ্ডলী প্রথার প্রবর্তন। এই মণ্ডলীপ্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন আমলাতন্ত্রের একাধিপত্য দূর করেছিলেন,  অন্য দিকে চাষিদের আর্থিক অবস্থা দূর করতে বিশ্বস্ত আমলাদের নানা নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই উদ্যোগে তিনি বাধার সম্মুখীনও হয়েছিলেন। ১৯০৮ সালের ১৪ জুলাই মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে লেখা একটি চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন…”আমার প্রজাদের মধ্যে যারা মুসলমান তাদের মধ্যে বেশ কাজ অগ্রসর হচ্চে– হিন্দু পল্লীতে বাধার অন্ত নেই।”

জমিদারির প্রধান কাজ অর্থাৎ কৃষি, স্বাস্থ্য,রাস্তাঘাট সংস্কার,কুয়ো ও পুকুর খনন, বিদ্যালয় স্থাপন, বিচার, ধর্মগোলা, সমবায়, মহাজনদের করাল গ্রাস থেকে চাষিকে রক্ষা করা এবং কুটির শিল্প স্থাপন প্রভৃতি জনকল্যাণমুখী কাজ যাতে পল্লির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এসব কাজে যাতে পল্লিবাসীর অংশগ্রহণ থাকে, সর্বোপরি গরিব অসহায় প্রজা ও জমিদারের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হয় সেই প্রচেষ্টাই নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই মণ্ডলীপ্রথাকে বর্তমান পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পথিকৃৎ বলা যেতে পারে।

পল্লি উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের প্রথম পর্বেই রবীন্দ্রনাথ ‘হিতৈষী বৃত্তি’ ও ‘কল্যাণ বৃত্তি’ নামে দু’টি করের প্রচলন করেন। এই বাবদ সংগৃহীত সব টাকাই ব্যয় করা হতো প্রজাদের উন্নয়নে। প্রজাদের কাছ থেকে হাল বকেয়া খাজনার টাকা প্রতি তিন পয়সা হিসেবে হিতৈষী বৃত্তি আদায় হতো। জমিদারি সেরেস্তা থেকেও মোট সংগৃহীত টাকার সমপরিমাণ দেওয়া হতো এবং সেই টাকা খরচের ব্যবস্থা করত প্রজাদের দ্বারা নির্বাচিত হিতৈষী সভা। কল্যাণ বৃত্তিও ছিল টাকায় তিন পয়সা। তার জন্য আলাদা রসিদও দেওয়া হতো এবং আদায়ের সমপরিমাণ টাকা দিতেন জমিদার নিজে। এই সমস্ত টাকা খরচ করা হয়েছে রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, মন্দির- মসজিদ সংস্কার আর গ্রামের গরিব মানুষ ও চাষিদের নানা সমস্যা-সংকট নিরসনে।

গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি পড়ল শিক্ষা ও চিকিৎসার দিকে। প্রতিটি গ্রামে জমিদার ও গ্রামবাসীদের টাকাতে যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন বিভাগে তিনটি মাইনর স্কুল এবং সদর কাছারিতে হাইস্কুল। একই পদ্ধতিতে ছাত্রাবাসও তৈরি হয়। ছাত্রাবাস ও ইস্কুল বাড়ির খরচ হিতৈষী সভা থেকে দেওয়া সম্ভব ছিলনা বলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জমিদারি এস্টেট থেকে সব খরচ চালাতেন।

কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন

রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহে থাকার সময়েই উপলব্ধি করেছিলেন চাষিদের শুধুমাত্র বলদ নিয়ে চাষ করলেই হবেনা, গ্রামোন্নয়ন করতে হলে প্রথমেই করতে হবে কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন ও সংস্কার। তিনি সম্যকভাবেই জানতেন যে, গ্রামের অধিকাংশই কৃষির সঙ্গে যুক্ত এবং অর্থনীতির মূল ভিত্তিও বাঁধা রয়েছে কৃষির সঙ্গে। তাই তিনি হাতে কলমে কাজের উদ্যোগ নিলেন। একদল তরুণকে দায়িত্ব দিলেন শিলাইদহের কুঠিবাড়ির বাগানের একদিকে নানারকম ফুলের গাছ ও সংলগ্ন জমিতে চিনেবাদাম, আলু, কপি, মটরশুঁটি ইত্যাদির চাষ করতে। অন্যদিকে নিজেই শুরু করলেন নানা রকম ফসল, সবজি ও রেশম চাষের পরীক্ষানিরীক্ষা। সেই সময়ে বিজ্ঞানী বন্ধু জগদীশ চন্দ্র বসুকে লেখা চিঠিতে জানা যায় যে, শিলাইদহের জন্য আমেরিকা থেকে ভুট্টার বীজ এবং মাদ্রাজি ধান আনিয়ে  পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। এছাড়া বন্ধু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সহায়তায় আলু চাষের পর্বও এই সময়েই।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর অসাধারণ দূরদৃষ্টিতে বুঝেছিলেন গতানুগতিক হাল-বলদে চাষের দিন ফুরিয়ে আসছে। চাষের কাজে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই ১৯০৬ সালে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে পাঠালেন আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিদ্যা ও প্রাণীপালন বিদ্যার পাঠ নিতে। একবছর পর জামাতা নগেন্দ্রনাথকেও পাঠান একই উদ্দেশ্যে। এই সময়ে পুত্র -জামাতাদের উদ্দেশে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

“তোমরা দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের অন্নগ্রাসের অংশ নিয়ে বিদেশে কৃষি শিখতে গেছ— ফিরে এসে এই হতভাগ্যদের অন্নগ্রাস কিছু পরিমাণেও যদি বাড়িয়ে দিতে পার তাহলে মনে সান্ত্বনা পাব। মনে রেখো জমিদারের টাকা চাষির টাকাএবং এই চাষিরাই তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার নিজেরা আধপেটা খেয়ে এবং না খেয়ে বহন করছে।এদের ঋণ সম্পূর্ণ শোধ করবার দায় তোমাদের উপর রইল।নিজের সাংসারিক উন্নতির চেয়েও এইটেই তোমাদের প্রথম কর্তব্য হবে।”

এই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের সমাজচেতনা,প্রজাদরদি ও মানবিকরূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৯০৯ সালে রথীন্দ্রনাথ ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ব্যাচেলর অব সায়েন্স’ ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। তার আগেই রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ এবং পতিসরে কৃষিক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। শিলাইদহে আশি বিঘা জমিতে হাতে কলমে কাজ শুরু হয়। মাটি পরীক্ষা ও সার তৈরির গবেষণাগার, পাম্পের সাহায্যে জলসেচ ইত্যাদির জন্য আমেরিকা থেকে কিছু যন্ত্রপাতি ও কিছু ফলনের বীজ আনানো হয়। এমনকী চাষের উন্নয়নের সহায়ক সার্কুলারও বিলি করা হয় গ্রামে। পতিসরে রথীন্দ্রনাথ নিজেই ট্রাক্টর চালানো শুরু করেন। প্রথম সেই দৃশ্য দেখার জন্য শত-সহস্র গ্রামবাসীর ভিড় জমে যায়। পরে তিনি কয়েকজনকে ট্রাক্টর চালানো শিখিয়ে দেন। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের জমিদারিতে চাষবাস নিয়ে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়। পরাধীন ভারতবর্ষে এই পর্ব ছিল কৃষিপরিকল্পনার এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

রথীন্দ্রনাথ ‘পিতৃস্মৃতি’-তে লিখেছেন:

“১৯০৯ সালের শেষদিকে আমি দেশে ফিরলুম।এসে দেখি শিলাইদহের কুঠিবাড়ি আমার জন্য প্রস্তুত– জমিদারির কাজকর্ম তদারক করার ফাঁকে ফাঁকে আমি আমার খেত খামার গড়ে তুলব, কৃষি নিয়ে পরীক্ষা গবেষণা করব— এই ছিল বাবার অভিপ্রায়।…. ফিরে আসার অল্প কিছুদিন পরেই বাবা আমায় নিয়ে বেরোলেন জমিদারি অঞ্চলে— উদ্দেশ্য, প্রজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আলাপ-পরিচয় হবে ও সেইসঙ্গে জমিদারির কাজকর্ম আমি তাঁর কাছ থেকে বুঝে নেব।সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।….  মাঝে মাঝে যখন তিনি নিজে কিছু বলতেন, তার বিষয় হত দেশের প্রজাসাধারণের সামাজিক ও আর্থিক দুরবস্থা এবং তার প্রতিকার কল্পে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান।….

শিলাইদহে আমার নূতন জীবন শুরু হল—আমি যেন ইংল্যান্ড-আমেরিকার পল্লী-অঞ্চলের একজন সম্পন্ন কৃষাণ। অনেকখানি জায়গা জুড়ে খেত তৈরি হল, আমেরিকা থেকে আমদানি হয়ে এল ভুট্টার বীজ ও গৃহপালিত পশুর জাব খাবার মত নানাবিধ ঘাসের বীজ। এদেশের উপযোগী করে নানারকম লাঙল, ফলা ও কৃষির অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি করা হল– এমনকি মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করার জন্য ছোটোখাটো একটি গবেষণাগারের পত্তন হলো”….(পৃষ্ঠা: ১০৭-১০৮)

গ্রামোন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ

এখানে অবশ্য স্মরণযোগ্য যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর আরব্ধ কাজ বাস্তবায়িত করতে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় , শ্যালক নগেন্দ্রনাথ চৌধুরী, প্রমথ চৌধুরীদের পাশাপাশি কালীমোহন ঘোষ, বিপ্লবী অতুল সেন, উপেন্দ্রনাথ ভদ্র, বিশ্বেশ্বর বসু প্রমুখ বেশ কয়েকজন উৎসাহী যুবককে পেয়েছিলেন,যাঁরা গ্রামসংগঠন ও পল্লিসেবায় নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কোমরকাঁদি গ্রামে কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্রতীদল। এদের কাজ ছিল নিরক্ষরতা দূরীকরণ, স্বাস্থ্য রক্ষা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শরীরচর্চা এবং আশেপাশের গ্রাম পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করা। এই সময়ে গ্রাম উন্নয়নের বেশ কিছু কর্মসূচি রূপায়ণ করেন রবীন্দ্রনাথ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য — শিলাইদহ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। বিরাহিমপুরে গরিব সাধারণ মানুষের স্বার্থে মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এখানে হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি ও কবিরাজি তিন পদ্ধতিতেই চিকিৎসা হতো। বিনামূল্যে কুইনাইন বিলি হতো। পতিসরে বড়ো হাসপাতাল তৈরি করিয়েছিলেন। কালীগ্রাম পরগনার তিনটি বিভাগে তিনজন ডাক্তার চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে বহু রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন। তিনি হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক এই দুই ধারাতেই চিকিৎসা করলেও শেষদিকে বায়োকেমিকের প্রতিই বেশি অনুরক্ত ছিলেন।

এসবের পাশাপাশি কুটিরশিল্পের উন্নয়নেও উদ্যোগী হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বয়ন ও তাঁত শিল্প, পটারির কাজও শুরু হয়েছিল এই সময়ে।

সমবায় ও কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন

দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত প্রজাদের অর্থকষ্ট দূর করতে শুরু থেকেই চিন্তা করে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ। তখন চাষিরা বড়ো বড়ো মহাজনদের দ্বারা ভয়ঙ্কর আর্থিক নিষ্পেষণের শিকার হতেন। রবীন্দ্রনাথ দেখলেন, এই সমস্ত মহাজনদের হাত থেকে চাষিদের মুক্ত করতে না পারলে গ্রামের দুর্গতি দূর হবে না। কৃষি ও কুটিরশিল্পের জন্য যে টাকার প্রয়োজন তা গরিব মানুষেরা কোনোদিনই সংগ্রহ করতে পারবে না। তাই তিনি সমবায় পদ্ধতিতে পতিসরে কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথের নতুন পল্লিসমাজ গড়ার পরিকল্পনায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রচলন এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি সর্বজনীন সমবায় ব্যবস্থা রূপায়ণ। তারই অসামান্য প্রকাশ পতিসরে কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন। তাঁর এই ভাবনার মূলে ছিল চিন্তায়, মানসিকতায়, কাজে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে পথচলা এবং গ্রামের সর্বাধিক শোষিত মানুষদের ভয়াবহ মহাজনি ঋণের কবল থেকে মুক্ত করা। রবীন্দ্রনাথের পল্লিউন্নয়ন ও পল্লিসমাজ গঠনের প্রচেষ্টায় কৃষিব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা ছিল এক অনন্য কীর্তি। চাষিদের অল্পসুদে টাকা ধার দিতে নিজের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে টাকা ধার করে ১৯০৫ সালে সূচনা করেন পতিসর কৃষিব্যাঙ্ক। পরে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাবার পর তার ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তিনি এই ব্যাঙ্কে জমা রাখেন। এতে প্রজাদের দারুণ উপকার হয়। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁরা মহাজনের টাকা শোধ করে দিতে সক্ষম হন। এই ব্যাঙ্কের প্রভাব এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে কালীগ্রাম থেকে মহাজনেরা ব্যাবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

কৃষিব্যাঙ্কের মতো ধর্মগোলা স্থাপনও কবি-জমিদার রবীন্দ্রনাথের সচেতন পল্লিসেবার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খরা,বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও আকস্মিক সংকটে গ্রামের মানুষ যাতে অন্নকষ্টে বিপন্ন না হন, তা ভেবেই রবীন্দ্রনাথ প্রজাদের সাহায্যে ধর্মগোলা স্থাপনের সুচিন্তিত পরিকল্পনা রূপায়ণ করেছিলেন।

সালিশী প্রথা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে প্রজানুরঞ্জনের কাজে অগ্রসর হয়ে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি নিজস্ব বিচার-ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তাঁর আমলে জমিদারির মধ্যে প্রজারা কোনো বিবাদ নিয়ে আদালতে যেত না। প্রত্যেক গ্রামের লোকেরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করতেন। ওই গ্রাম প্রধানরাই পরে আবার পরগনার সব প্রধানদের মধ্য থেকে পাঁচ জনকে মনোনীত করতেন। তাঁদের বলা হতো পঞ্চপ্রধান। সমস্ত বিবাদ ও বিরোধ এই পঞ্চপ্রধানরাই মিটিয়ে দিতেন। একেবারে শেষ আপিল যেত রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত এই বিচার ব্যবস্থায় কোনো টাকা খরচ হতো না। এই ব্যবস্থার ফলে গরিব প্রজারা মামলার খরচ থেকে রেহাই পেয়েছিল।

ব্যতিক্রমী জমিদার

১৮৯০ থেকে ১৯২২– এই ক’বছর প্রত্যক্ষভাবে জমিদারি পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাতে যে উপলব্ধি তাঁর হয়েছিল তার কিছুটা ব্যক্ত করেছেন প্রমথ চৌধুরীর ‘রায়তের কথা’ বইয়ের ভূমিকায়। সেখানে তিনি বলেছেন:

“আমার জন্মগত পেশা জমিদারি, কিন্তু আমার স্বভাবগত পেশা আসমানদারি। এই কারণেই জমিদারির জমি আঁকড়ে থাকতে আমার অন্তরের প্রবৃত্তি নেই। এই জিনিসটার ‘পরে আমার শ্রদ্ধার একান্ত অভাব। আমি জানি জমিদার জমির জোঁক, সে প্যারাসাইট,প রাশ্রিত জীব।…. প্রজারা আমাদের অন্ন জোগায়, আর আমলারা আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেয়– এর মধ্যে পৌরুষও নেই, গৌরবও নেই।”

এই রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব নিয়েও কিন্তু  জমিদার হিসেবে যান নি,গিয়েছিলেন স্বদেশহিতৈষী কর্মী রূপে, প্রজাদের অভিভাবক হিসেবে। এসেই আত্মীয়তা পাতিয়েছেন চাষিদের সঙ্গে, আবার কড়া নজর রেখেছেন আমলা, মহাজন আর জোতদারদের উপর। তাঁর একান্ত উদ্দেশ্য  ছিল প্রজাদের স্বাবলম্বী করা, আত্মশক্তিতে উদবুদ্ধ করা, চাষের কাজে সাফল্য অর্জন করা। প্রমথ চৌধুরী তাঁর বইয়ে (‘রায়তের কথা’) যথার্থই বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবেও যেমন জমিদার হিসেবেও তেমনি unique”

রবীন্দ্রনাথের পল্লিসংস্কারের পরিকল্পনা শিলাইদহ অপেক্ষা কালীগ্রামেই বেশি সার্থক হয়েছিল। ঠাকুর বংশের জমিদারির মধ্যে সবচেয়ে বড়ো এলাকা ছিল কালীগ্রামেই। রবীন্দ্রনাথ প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতে নিজে পায়ে হেঁটে গ্রামের পথে বেড়াতে বেরোতেন। বরকন্দাজরা পিছু নিলে তাদের সরিয়ে দিতেন। তিনি বোটে বা কুঠিবাড়িতে যেখানেই থাকতেন, যে কেউ এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন, নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারতেন। তিনি সাধ্যমতো এর প্রতিকারের ব্যবস্থাও করেছেন। ফসলহানির খবরে উদ্বিগ্ন রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর নায়েবকে প্রজাদের ওপর খাজনা আদায়ে চাপ না দেবার নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি প্রজার সংকটে অনেক সময়ে খাজনা মকুবও করেছেন। জমিদার হয়েও তিনি নিজে খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। তাঁর জমিদারির সময়কালে বিভিন্ন সময়ে গিয়েছেন বলেন্দ্রনাথ, সুরেন্দ্রনাথসহ বন্ধু বন্ধবেরা। বেড়াতে এসেছেন লোকেন পালিত, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, জগদিন্দ্রনাথ রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, যতীন্দ্রনাথ বসু, ভগিনী নিবেদিতা প্রমুখ। শান্তিনিকেতন থেকে গিয়েছেন পিয়ার্সন, সি এফ এন্ডরুজ, নন্দলাল বসু,সুরেন কর, মুকুল দে।এছাড়া একবার শাহজাদপুরে নিয়ে গিয়েছিলেন দুই ভাইপো গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথক। এখানে আলোচনার অবকাশ না থাকলেও যে বিষয়টি উল্লেখ করা অবশ্য প্রয়োজন তা হলো, রবীন্দ্রনাথ তাঁর জমিদারি পরিচালনার কাজে শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুর যেখানেই অবস্থান করেছেন, তা বোটেই হোক বা কুঠিবাড়িতে, প্রজাকল্যাণের চিন্তায়, নানা কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর কাব্য ও সাহিত্যের প্রবাহ কিন্তু আপন গতিতেই চলেছে। এই সময়ে পল্লির বাস্তব চেহারা, প্রজাদের দুঃখযন্ত্রণা, কৃষকের দৈন্যদশা তিনি জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে যা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তা তিনি সমকালীন কাব্য, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদিতে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।

জমিদারিতে অন্তিম পদার্পণ

রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে শেষ যান ১৯২২ সালে এবং পতিসরে তাঁর শেষ যাত্রা ১৯৩৭ সালে। শিলাইদহে শেষ যাত্রার সময়ে গ্রামবাসীরা কবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানান। কবিকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি মানপত্র পাঠ করা হয়। চৌদ্দ-পনেরো মাইল দূর থেকেও প্রজারা এসেছিলেন তাঁদের বাবুমশাইকে নজরানা দিতে। স্থানীয় মুসলমান মহিলারা রবীন্দ্রনাথকে একটি কাঁথা উপহার দেন।

পতিসরে কবির শেষ যাত্রার সময়ে (২৭জুলাই,১৯৩৭) তাঁর বয়স ছিয়াত্তর, শরীর অশক্ত। সেবার তিনি ছিলেন বোটে। নাগর নদীর তীর ছিল  দর্শনার্থী নরনারীর ভিড়ে পরিপূর্ণ। পরদিন (২৮ জুলাই) মহাসমারোহে পালিত হলো ‘পুণ্যাহ অনুষ্ঠান’। এখানেও দূরদূরান্ত থেকে প্রজারা উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের ‘বাবুমশাই’কে এক নজর দেখতে। দর্শনার্থীদের  অধিকাংশই মুসলমান প্রজা। বিকেলে কাছারি বাড়িতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ বোট থেকে নেমে পালকিতে করে সভায় এলেন। এখানে সংবর্ধনার উত্তরে বিষাদময় কণ্ঠে কবি উচ্চারণ করলেন:

সংসার থেকে বিদায় নেবার সময় তোমাদের সঙ্গে দেখা হল–এইটেই আমার সান্ত্বনা। তোমাদের কাছে অনেক পেয়েছি– কিন্তু কিছু দিতে পেরেছি বলে মনে হয় না। সেসব কথা মনে হলে বড় দুঃখ পাই। কিন্তু আর সময় নেই, আমার যাবার সময় হয়েছে, শরীর আমার অসুস্থ — এ অবস্থায় তোমাদের মধ্যে এসে, তোমাদের সঙ্গে থেকে তোমাদের উন্নতির জন্য কিছু করবার ইচ্ছা থাকলেও, আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াও, তোমাদের সবার মঙ্গল হোক— তোমাদের সবাইকে এই আশীর্বাদই আমার শেষ আশীর্বাদ।”

তখন গোটা পরিবেশে প্রলম্বিত বিষণ্ণতার ছায়া, উপস্থিত সবার চোখ অশ্রুসিক্ত। একজন বৃদ্ধ মুসলমান প্রজা কবিকে সেলাম জানিয়ে বলে উঠলেন,“আমরা তো হুজুর বুড়ো হয়েছি, আমরাও চলতি পথে, বড়ই দুঃখ হয়, প্রজা-মনিবের এমন মধুর সম্বন্ধের ধারা বুঝি ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যায়।”  বিদায়ের অন্তিম লগ্নে যেন বিষণ্ণতার আবহ আরও গাঢ়তর হলো। কবির মনও তখন ভারাক্রান্ত-বিচলিত। বললেন,“তোমরা আমার বড়ো আপন জন, তোমরা সুখে থাক।”

পতিসর থেকে বিদায় মুহূর্তেও আবেগঘন বিষাদময় পরিবেশ। কবিকে নিয়ে নাগর নদীর ঘাট থেকে বোট চলতে শুরু করেছে। ঘাটে ও নদীর দু’ধারে ছবির মতো দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ, বিষণ্ণ, অশ্রুসজল চোখে অগণিত গ্রামবাসী। তাঁরা এসেছেন তাঁদের প্রিয় শ্রদ্ধার মানুষটিকে বিদায় জানাতে। অনেকেই নদীর ধার ধরে এগিয়ে চলেছেন, তাঁদের দৃষ্টি বোটের দিকে। তখন যেন চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কবিরই সেই অনুপম সৃষ্টি —

“আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবা-পানে।
স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।
নীচে সব-নীচে এ ধূলির ধরণীতে
যেথা আসনের মূল্য না হয় দিতে,
যেথা রেখা দিয়ে ভাগ করা নেই কিছু,
যেথা ভেদ নাই মানে আর অপমানে।
স্থান দাও সেথা সকলের মাঝখানে।”…..

তথ্যসূত্র:

১) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘গীতাঞ্জলি’, (বিদ্যামন্দির-২০০২, কলকাতা-৭৩), পৃষ্ঠা:১২৮।
২)অমিতাভ চৌধুরী, ‘জমিদার রবীন্দ্রনাথ’, (বিশ্বভারতী-১৪১৯, কলকাতা-১৭)।
৩)আহমদ রফিক, রবীন্দ্রভুবনে পতিসর’, (কথা-২০১১, কলকাতা-৪৭)।
৪)প্রশান্তকুমার পাল, ‘ রবিজীবনী’ তৃতীয় খণ্ড,পৃষ্ঠা : ১৩৭-১৩৮, (আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা-৯)
৫)পশ্চিমবঙ্গ’, রাজ্য সরকারের মাসিক মুখপত্র, ‘সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ’, সার্ধশতবর্ষ রবীন্দ্রস্মরণ সংখ্যা-২০১০।প্রবন্ধ- ‘রবীন্দ্রনাথের পল্লিচিন্তার প্রেক্ষাপট ও কর্মসূচি রূপায়ণ’, সুকুমার মল্লিক, পৃষ্ঠা: ১২৬-১৩৩। প্রবন্ধ-‘রবীন্দ্রনাথ  স্রষ্টা থেকে সংগঠক’, পিনাকেশ সরকার, পৃষ্ঠা:২৩৩-২৩৮।

লেখক:
Sandeep Dey
সন্দীপ দে, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

*প্রকাশিত লেখার মতামত ও বানানরীতি লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাঙালীয়ানার সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই প্রকাশিত এ লেখা বা লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা সংক্রান্ত আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় বাঙালীয়ানার নেই। – সম্পাদক

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট