সাদিকুর রহমান পরাগের কবিতা

Comments

অল ক্লিয়ার

জিরো-টু…
না, না…ও পথে না।
টু-জিরো…
না, না…এ পথেও না।
অপেক্ষা করো…
যেখানে আছো, সেখানেই থাকো।
…দেখতে পাচ্ছো?
রানওয়ে কি দেখতে পাচ্ছো?

অল ক্লিয়ার…
আমরা দেখতে পাচ্ছি।
টু-জিরো…
জিরো-টু…
এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে
অজানা একটি রানওয়ে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি
সেই অজানা রানওয়ে।

অল ক্লিয়ার…
আমরা দেখতে পাচ্ছি
আমরা দেখতে পাচ্ছি…
সেই অনন্ত যাত্রার পথ
যে পথ দেখা যায় না খালি চোখে
যে পথ সবাই দেখতে পায় না।

আমরা দেখতে পাচ্ছি…
অন্তিম যাত্রার সেই পথ,
যে পথ দেখা দেয় শুধু তারে
যার আসে ডাক অনন্তলোকে।
অল ক্লিয়ার… আমরা যাচ্ছি
অন্তিম যাত্রার সেই পথে।
যে পথে গেলে একবার
কেউ তো ফিরে না আর।
যেতে হয়–চলে যেতে হয়।
ডাক এলে–চলে যেতে হয়
পিছে ফেলে সব ভালোবাসা।
ডাক এলে–চলে যেতে হয়
সব পিছুটান উপেক্ষা করে।
ডাক এলে–চলে যেতে হয়
এপারে শুধু স্মৃতিচিহ্ন রেখে।
আমরা যাচ্ছি–আমরা যাচ্ছি।

অই পথ ধরে অনন্তলোকে
হেঁটে গেল তিন জ্যোতির্ময়
অনিরুদ্ধ, বিপাশা আর রিমু।

(নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্মরণে)

আমরা তাকে ভুলবো না

আমরা তাকে ভুলবো না, যেমন ভুলবো না
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।
আমরা তাকে ভুলবো না, যেমন ভুলবো না
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি।
আমরা তাকে ভুলবো না, যেমন ভুলবো না
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি।

আমরা তাকে মনে রাখবো।
মনে রাখবো দীর্ঘ রাতে ভোরের প্রতীক্ষায়
শহিদ বেদিতে দাঁড়িয়ে আমার প্রতিজ্ঞায়
আর রক্তঝরা আমার দুখিনী বর্ণমালায়।

আমরা তাকে মনে রাখবো।
মনে রাখবো মানুষের মুক্তির শ্লোগানে
খালি পায়ে হেঁটে প্রভাতফেরির গানে
রক্তপলাশ আর কোকিলের কুহুতানে।

আমরা তাকে মনে রাখবো।
মনে রাখবো শরতের আকাশে চুপিসারি কান্নায়
নবান্নের দেশে হিজল-তমাল-জারুলের ছায়ে
মেঘনার জলে ছুটে চলা লঞ্চের ভো-ধ্বনিতে।

আমরা তাকে মনে রাখবো।
মনে রাখবো বেহুলা বাংলার ভাসান-যাত্রায়
স্রোতের প্রতিক‚লে অবিরাম সাঁতার কেটে
পলাশী থেকে ধানমন্ডির অভিযাত্রায়।

আমরা তাকে মনে রাখবো।
মনে রাখবো কালি ও কলমে অপ্রিয় বচনে
আপসের চেনা পথ ছেড়ে ক্লান্তিহীন খননে
নিঃসঙ্গ শেরপার মতো একাকি অনুসন্ধানে।

(আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিবেদন)

মোমের জীবন

জন্মের দায়
পুড়িয়ে মেটায়
পুড়ে পুড়ে হয় নিঃশেষ
পুড়ে যেতে হায়
কী যে সুখ পায়
তবুও পুড়ে নির্নিমেষ
আলো জ্বেলে যায়
নিজেরে পোড়ায়
পোড়া পোড়া আবেশ
সয়ে সয়ে যায়
পুড়িয়ে জুড়ায়
থাকে না তো অবশেষ
কে রাখে মনে
পুড়ে ক্ষণে ক্ষণে
পোড়াতেই সব শেষ
আহা রে জীবন
পোড়া এই জীবন
মোমের জীবন

শহরনামা

হয়তো তার কাছে ফুরিয়েছি আমি।
প্রতিটি ইট-পাথর, রাস্তার অলিগলি,
বড় রাস্তার মোড় আর স্ট্রিটলাইট
প্রতিনিয়ত বলে, ‘এখানে তোমার প্রয়োজন নেই’।
শহরগুলো নাকি এমনই হয়।

শহরের কোনো হৃদয় নেই। থাকতেও নেই।
হৃদয় থাকলে সে নাকি আর শহর থাকে না।
তার কাছে হৃদয় একটা সেকেলে ব্যাপার,
এক ধরনের মনোবৈকল্য–এতে আধুনিকতা নেই।
ঝলমলে মোড়কে আবৃত নিষ্প্রাণ এক সত্তা।

কসমো, মেট্রো যে নামেই ডাকো না কেন
শহর হচ্ছে ধুন্ধুমার এক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।
এখানে ছুটতে হয়। ক্রমাগত ছুটতে হয়।
এখানে দিতে হয়। উজাড় করে দিতে হয়।
শহর শুধু নিতেই জানে, দিতে জানে না।

এই শহর কখনো দয়া দেখানোর নয়।
এই শহর কখনো মায়ায় জড়ানোর নয়।
এই শহর কখনো ভালোবাসায় বাঁধার নয়।
এখানে কোনো প্রাণ নেই, প্রলোভন আছে।
এখানে কোনো জাদু নেই, মোহ আছে।

মোহ কেটে গেলে নির্মমতা চোখ রাঙায়।
ছুড়ে ফেলে দিতে একটুও দ্বিধা করে না।
শহরগুলো নাকি এমনই হয়।
ঘুরিয়ে বললে, এমনটা হলেই নাকি শহর হয়।
প্রয়োজন ফুরালে কাউকে আর মনে রাখে না।

নির্বোধ বসে থাকে নির্বিকার

আজ পড়ে গেল।
আজ পড়ে গেল জলে।
আজ বল পড়ে গেল জলে।

বাতাস জুড়ে সীসার কলরব
শুষে নেয় বোধ জীবনের সব
তবুও শুকোয় না রক্তের স্রোত

আজ পড়ে গেল।
আজ পড়ে গেল কলে।
আজ জল পড়ে গেল কলে।

খোকা আর আসে না ফিরে
তবুও বসে থাকে মা ভাত নিয়ে
বেয়ে পড়ে চোখ দিয়ে রক্তজল

আজ ওঠে নড়ে।
আজ কল ওঠে নড়ে।
আজ ধর্মের কল ওঠে নড়ে।

আঁকড়ে ধরে জীবনের আয়োজন
তারপরও বারুদ-গন্ধী বাতাসে
মানুষ কেমন শ্বাস নেয় প্রাণভরে

আজ বল পড়ে গেল জলে
আজ জল পড়ে গেল কলে
আজ ধর্মের কল ওঠে নড়ে

নির্বোধ বসে থাকে নির্বিকার

লেখক:
Parag 3
সাদিকুর রহমান পরাগ, কবি, কথাকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট