১
ধোয়াশা কুয়াশা দিনে,
বিকালের রোদ মরে আসে।
পাতারা কুঁকড়ে থাকে
অনন্ত শীতে।
যখন আকাশে নীল
ধুসরে মিলায়।
তুমি ভালো আছো, কবি
বিষণ্ন সন্ধ্যায়?
চায়ের কাপের উত্তাপ
জল হয় ধীরে ধীরে।
অ্যাশট্রেতে জ্বলে যায়
একা সিগারেট।
ডাইরিটা খোলা পড়ে,
অলস বলপয়েন্ট।
জানালার পাশ ঘেষে
কামিনীর ঝোপ।
একা একা বসে বসে
কী এতো ভাবো
সারাক্ষণ?
কেনই বা এতো উন্মন?
ভালো আছো, কবি তুমি-
কবিতাবিহীন এই
নিদারুণ দিনে?

২
সেই রাতের পর রাত
আর দুপুর, বিকেলগুলো
ফিরিয়ে দিও!
ফিরিয়ে দিও সেইসব
মদিরা সময়!
ফিরিয়ে দিও দিন মাস বছরের
পান্ডুলিপি,
ফিরিয়ে দিও অকৃত্রিম
প্রেম যতো, প্রতীক্ষার প্রহর,
বেহিসেবি চাওয়া- পাওয়া সব।
ফিরিয়ে দিও ভালোবাসা
হৃদয়ের অফুরান উত্তাপ!
ফিরিয়ে দিও…
ফিরিয়ে দিও…

৩
জানিনা আবার কবে হবে বা দেখা
জানিনা হবে কি হবে না কথা, অকারণ চিঠি লেখা
দ্বিধায় দহনে ভাঙচুর প্রতিদিনই
এই ঠিক-এই ভুলের জীবনখানি
আয়না জানে না, কার মুখ রাখে ধরে
বারবার তবু একই পথে কেন
ফেরে
মনের গোপন, মনের গভীর জানে
ভালোবাসা ছিল নিশ্চয়ই কোনোখানে

৪
তোর জন্য কবিতা, অনেকদিনের পরে…
তুই কি আমার হাতটা রাখবি হাতে?
মুঠোর উষ্ণতায় কিছুক্ষণ?
বুকের মাঝে মাথা রেখে আমি
কাঁদবো নাহয় শুধুই অকারণ!
তুই কি আমার বুকের ওমে ফের
খুঁজবি কারো প্রজাপতি মন?
মগ্ন দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যাবেলা
গাঁথবো আবার ব্যাথার আলাপণ?

৫
বাতাস ছড়িয়ে দেয় ঝরে পড়া
একমুঠো বকুলের ফুল,
চিরঘুম মাটির কুটিরে।
আলগোছে বেড়ে ওঠা দুর্বাঘাস,
নোনাধরা পুরোনো দেয়াল
ঝাপসা হয়ে আসা নাম-পরিচয়!
একদিন গল্প ছিল,
উৎসব, আলোর প্রহর,
রঙিন বেলুন,
লুকোনো কান্নার ঝাঁপি,
সাবেকি প্রাসাদের সারি।
পদ্মপুকুরে ছিল
জীবনের গান।
চোরাবালি প্রেম ছিল
সুপুরি বিছানো পথ জুড়ে।
বাগান ঘিরে আজো প্রাচীন পাঁচিল,
এককোনে তারই, ক্ষয়ে যাওয়া
শ্বেতপাথরের মলিন ফলক।
একদিন গল্প ছিল-
আজ ইতিহাস।

লেখক:
সালমা ইয়াসমিন, সাংবাদিক ও কবি