সেই ঘ্রাণটা
আমার মায়ের গায়ে যে ঘ্রাণটা ছিলো
কি ঘ্রাণটা ছিলো
এমন গন্ধ আর পাই না
পাশ দিয়া হাঁটলে, মাথার ভিতর থাকতো মা
মা মরার সময় আমি ছিলাম ঢাকা
চাকরীর খোঁজে
তাই খবর দেয় নাই
দুই দিন পর বাড়ির ঘাটে নৌকা
মা নাই, ঘাটে নাই, কবরে
আমারে কেউ খবর দেয় নাই
আমার ভাই
বলছে চাকরির ক্ষতি, দরকার নাই
ঢাকা থেকে বাড়ি, একদিন
খবর দেয় নাই
আমার কাছে আঙ্গুর, মায়ের জন্য
আর আঙ্গুর খাই নাই, দশ বছর
ছেলে বড়ো হইলে আঙ্গুর খাইছি, তার সাথে
এখন কতো টেলিফোন
লোকে কথা কয়
মা, ভাত খাইছো?
আরো কতো
আমার সে সময় ফোন নাই
কথা বলি নাই
মায়ের সঙ্গে কথা বলি নাই
কথা বলি নাই
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
আশ্বিন ১০, ১৪২৯

একদা
এক প্রেম ভেঙে লিখেছি অনেক
– প্রেম না, আমরা বন্ধু
হয়তো তাই, হয়তো তুমি ঠিক, বরাবরের মতো
তবু লিখেছি অনেক, সেই না প্রেম না অন্য কিছুর নামে
– অসুবিধে নেই, সময় সময় ভালোই তো লাগে
প্রীত হলাম, তোমার মৃদু হাসি, আর আমার ভেতর ফুঁড়ে বেরোনো শব্দ
– এতো আবেগ কেনো, আমাদের তো প্রেম হয়নি
আর তো কিছু নেই, তাই ফুল ফুটলে, উতলা বাতাসে, কখনো একদম এমনিই আসে জোয়ার
– এমনি আসে?
আসে, কখনো
– তাহলে প্রিয়ার হাসি আর চোখের মায়ার গান, কার জন্য?
সে গান মনে আছে? বলোনি তো
– কেনো বলবো, এমন লজ্জাহীনের প্রেম
এতো আবেগ কেনো, আমরা তো বন্ধু শুধু
– বন্ধু কিংবা প্রেমের মানুষ, একই কথা
সত্যি?
– সত্যি, যে জানে সে জানে
এপ্রিল ১৮, ২০২২
বৈশাখ ৫, ১৪২৯

একশো একটা মায়া
ফেরত যাবো, সেই শর্তেই দেখা
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আমি, তুমিও, হয়তো আরো বেশী
আছে মনের মিলন, একটুখানি স্পর্শের সুখ, চোখের আদানপ্রদান
তবু সপ্তাহান্তের কফি শেষে নিজের নিজের বাড়ি ফেরা তোমার আমার বড়ো সত্য
ঝাপসা চোখে বাঁকা ভুরুর হাসি, টাটকা কফির উষ্ণ ধোঁয়ায় ভেজা আমার চশমার কাঁচ
তোমার হাতের ছোঁয়ায়, হাল্কা লেসের ছোট্ট রুমাল,
ঝকঝকে নতুন
একশো একটা বাঁধন আমার – আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা
তারই মাঝে আনলে তুমি, কেনো, একশো দুইয়ের ধাঁধা
এপ্রিল ১৭, ২০২২
বৈশাখ ৪, ১৪২৯

মন খারাপ
দুর্নাম আর শরীরহানি
তবু চাই প্রিয় ঝিমঝিমে সুরা
পরকালে নেই সাতশো হুরির সমাবেশ
রোদে পোড়া এই পাথরের দিন, বদ্ধ রাত্রিই শেষ ভরসা
তুমিও তো জানো
হলুদ চোখের আঁধার আলো যদি ছোঁয় কারো শরীরের ভাঁজ
কোথায় পাবে সে জান্নাতি ফুল
তার চেয়ে এসো খুঁজি কিছু
উষ্ণ আকাশ, শরীরের গান, জমাট আসর
অসম্ভবের স্বপ্ন দেখি
একাল ওকাল সবকিছু শেষ, তোমার আমার সকলের
জুলাই ২৭, ২০২২
১২ শ্রাবণ, ১৪২৯

বন্ধু
প্লীজ, আপনি আমার শুধু বন্ধু হোন।
না
বরং হৃদপিণ্ডের একটি প্রকোষ্ঠ বন্ধ করে দেই
স্ফুলিঙ্গ আর রক্তপ্রবাহ আটকে যাবে
মিয়োনো মানুষ, শ্বাস চালু-বন্ধ কি আসে যায়
অথবা চুল চেঁছে মুখে কালি মেখে হাতে ভিক্ষার ঝোলা
কুৎসিত মুখভঙ্গি, মাইক্রোফোনে অশ্লীল গানের কলি
বড়ো রাস্তায়
ঘৃণা আর ভয়ে তুমি পালাচ্ছো
চাও স্বস্তি
আমার বন্ধুত্ব নয়।
আমি তোমার সুখ শখ সঙ্গ সখ্য ছারখার করে দেবো
নির্লজ্জ টেলিফোন, টেক্সট, ই-মেইল, ডাকপিওনের চিঠির স্রোতে তটস্থ তুমি
উদ্বেগ দুশ্চিন্তা আতংকে তোমার বিছানা, স্নানঘর, গাড়ীর পেছনের সীট দখল
এখনো চাও বন্ধুত্ব!
ভয় নেই
আমি এসব কিছুই করবো না
পাট খোলা সাদা পাঞ্জাবী, হালকা নীল কটি
ঝকঝকে নাগড়ায় সিগারেটের ফিলটার পিষে হাত মেলাবো দারুণ ভদ্রতায়
তোমার পরিবার এবং অভ্যাগত সকলে মুগ্ধ
এমন খোলামেলা মানুষ !
কথা দিচ্ছি
আমার খোলস রইবে অটুট
বহুদিনের অভ্যেসে রপ্ত সংযম
কেউ জানবে না, বুঝবে না
শুধু আর কোনদিন চেয়ো না আমার বন্ধুত্ব।
কোনদিন।
মার্চ ৩, ২০২১
ফাল্গুন ১৮, ১৪২৭

লেখক:
সৌমী মোস্তফা, কবি, গবেষক, অর্থনীতিবিদ