১৯৬৫-র একদম শেষ বা ১৯৬৬-র শুরু।
আমরা তখন ঠাকুরগাঁও ওয়াপদা কলোনিতে থাকি। পাক- ভারত যুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। কাজী মাজহারুল হুদা মানে আমার আব্বা দু’সপ্তাহের জন্যে ছুটি নিয়ে ঢাকায় চলে গেলেন।
তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন! ঢাকায় গিয়ে চুক্তিও করে ফেললেন এবং অগ্রীম টাকা যা পেলেন তা দিয়ে শখের জিনিসপত্র কিনে ফিরে যখন দিনাজপুর রেল স্টেশনে নামলেন, পড়ে গেলেন এক্কেবারে আমার বড় চাচার সামনে। বড়চাচা কি ভাবে যেন খবর পেয়ে গিয়েছিলেন। ব্যাস, স্টেশনে গিয়ে ছোট ভাইকে পাকড়াও করার জন্য অপেক্ষা।
স্টেশন থেকে সোজা বাড়ি। বিস্তারিত শুনে বড়চাচা জানিয়ে দিলেন, কাজী বাড়ির ছেলে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারবে না। যদি করে তবে বড় চাচার সামনে কোন দিন যেন না আসে। আব্বার ভাগের জমি বেচে অভিনয়ের অগ্রীম টাকা ফেরতের ব্যবস্থা বড়চাচাই করে দিলেন।
আব্বা ঠাকুরগাঁ ফিরে এসে অনেকদিন মনমরা হয়ে থাকলেন। আম্মা এসব জানতেন। আমরা জানলাম একটু একটু করে, বেশ কিছু দিন ধরে, বেশ কিছুদিন পরে।
ঢাকা থেকে অনেক কিছুর সাথে খুব শখ করে কিনে এনেছিলেন একটা টেপরেকর্ডার। বেশ কিছু দিন মনমরা থেকে, টেপরেকর্ডারটা নিয়ে তিনি আবার মেতে উঠলেন। রেডিও তো আগে থেকেই ছিল। সেটা থেকে প্রিয় গানগুলো খুব যত্ন করে রেকর্ড করে নিজের সময় ও ইচ্ছে মতো পরে বাজিয়ে শুনতেন। বাসায় কেউ বেড়াতে এলে, চুপ করে অতিথিদের কথা রেকর্ড করে, পরে সেসব শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দিতেন। কলের গানের ব্যাপারটা সবার জানা ছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে রেকর্ড হওয়া কথাবার্তা শুনে তখন অনেকে বেশ অবাক হতো, মজাও পেত।
কলোনির মধ্যে যারা গাইত তাদের গান রেকর্ড করে আব্বা খুব আনন্দ পেতেন। সহপাঠি শান্তর মা ছবি সেনগুপ্তা ছিলেন মেয়েদের স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁকে কলোনির ছোটবড় সবাই ডাকত ছবিদি বা ছবিদি আপা বলে। তিনি ভালো গাইতেন। তাঁর গান, আমার সহপাঠী হিরুর বোন ছবি আপা, রুবি আপা, মনসুর চাচার মেয়ে রেখা আপা, রব্বানী চাচা এবং চাচার মেয়ে আমার সহপাঠি বাবলুর বড় বোন ডলি আপা.. শহরের কেউ কেউ … এমন অনেকের গান রেকর্ড করা হয়েছিল। বাসায় মাঝে মাঝে ঘরোয়া গানের আসর বসত। শহর থেকেও কেউ কেউ তাতে যোগ দিতেন। তবলা বাজাতেন ভূপেন দাস। সবাই তাকে ডাকতাম, ভুটু দা বলে। নিপেন দাস মানে নিকুদাও গান গাইতেন। রব্বানী চাচার ছেলে আমার বন্ধু বাবলুও গান গাইতো এবং ভালো তবলা বাজাতো। এছাড়া ছিল কলোনির যত্ত বাচ্চাকাচ্চাদের হাসি-আবৃত্তি-চিৎকার-চেঁচামেচির রেকর্ড হয়ে গেল। আবার আশেপাশের চেনাজানা ভালো গাইয়েদের ধরে এনে, খাইয়ে দাইয়ে, গান রেকর্ড করে রাখতেন। কলোনির চাচা খালাম্মারাও মজা পেতেন আব্বার শখ নিয়ে। কেউ কেউ এসবে অহেতুক পয়সা নষ্ট করা নিয়ে আন্তরিক ভাবে বকেও দিতেন। আম্মাকেও রাশ টেনে রাখার জন্য অনেক খালাম্মা বলতেন। আব্বা এসব শুনলে হেসে উড়িয়ে দিতেন।
আব্বার চাকরি যতটা সাধারণ ছিল, জীবনযাপন ততটা সাধারণ ছিল না। আমাদেরও, মানে আম্মাসহ, মাঝে মাঝেই সেটার সামনে আবৃত্তি, গান গাওয়া, আব্বার সাথে কথোপকথন করতে হতো। আমাদের ভালো লাগতো। টেপরেকর্ডাটটা নিয়ে সিরিয়াস কাজও করতেন। সে অন্য গল্প।
পরের ক’বছর আমরা পীরগঞ্জ ও বীরগঞ্জে থাকলাম আব্বার বদলির কারণে। আমরা আবার ঠাকুরগাঁও ফিরে এলাম ১৯৬৯ সালের শেষে।

কাজী মাজহারুল হুদা
১৯৭০ সালের জাতীয় জীবনের বড় দুটো ঘটনা হলো, নভেম্বরের মাঝামঝি প্রলয়ংকরি ঘুর্নিঝড়ে দক্ষিণের ভোলা উপকূলে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু আর ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়। আমাদের কলোনির জীবনে স্বাভাবিকভাবেই এসবের প্রভাব পড়েছিল। সে অনেক গল্প।
এলো ১৯৭১ সাল। মার্চের ১ম সপ্তাহ। আব্বার ওয়াপদাতে চাকরি । থাকি কলোনিতে। প্রতিদিন শহর থেকে বের হওয়া মিছিলগুলো সকাল বিকেল কলোনির ভিতর দিয়েও এক চক্কর ঘুরে যেত। আমরা বাসা থেকে বের হয়ে সে সব দেখতাম। কখনো কখনো মিছিলের পিছনে পিছনে কলোনির গেট পর্যন্ত যেতাম। বড়রা মিছিলের সাথে সাথে শহরেও চলে যেতেন। এরকম এক মিছিলে ছিল অনেক নারী আর স্কুল-কলেজের ছাত্রী। কলোনির সব খালাম্মারাও সেই মিছিলে যোগ দিয়ে শহরের আরেক মাথায় সিনেমা হল পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
আজহার মামার বড় ছেলে মেট্রিক পরীক্ষার্থী ফারুক ভাই কলোনির সব ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সিনিয়র। তিনি খড় দিয়ে ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর কুশপুত্তলিকা বানাতেন। সেগুলো পাব্লিক লাইব্রেরির সামনে মিছিল শেষে দাহ করা হতো। চিকিৎসক ফারুক ভাই সরকারি চাকুরী শেষে এখন অবসরে। মোমেন চাচা অফিসের পর বিকেলে শহরে জেলা স্কুলের পাশে ‘আর্ট গ্যালারি’তে চলে যেতেন। সেখানে তিনি সাইনবোর্ড লেখতেন। খুব ভালো লিখতে পারতেন। ছবিও আঁকতেন। মিছিলের ব্যানার লেখার কাজ ছিল প্রচুর। বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব। স্কুল নেই। পড়াশুনা নেই।
৭ মার্চ সকাল থেকে আব্বা টেপরেকর্ডারটা নিয়ে রেডিওর সামনে তৈরী। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হবে। তিনি সেটা রেকর্ড করবেন। দুপুরের পর থেকে আব্বার অস্থিরতা বেড়ে চললো। মনে পড়ে, রেডিওতে ভাষণটা প্রচার হবে এই মর্মে বার বার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল। বিকেল গড়িয়ে গেল। এক সময় রেডিও নিশ্চুপ। তিনি নানাভাবে রেডিওর নব ঘুরিয়ে, রেডিও এদিক ওদিক নেড়ে চেড়ে চেষ্টা করলেন। রেডিও মানে ঢাকা কেন্দ্র আর বেজে উঠলো না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলেন। ভাষণ আর সেদিন রেডিওতে প্রচার হলো না। আব্বা খুব আশাহত হয়ে বসে থাকলেন। সন্ধ্যা নামলে আব্বা বাইরে চলে গেলেন।
পরদিন সকাল থেকে আবার রেডিওর সামনে টেপ-রেকর্ডার নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে রইলেন। সকাল ৯টার দিকে যখন রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হলো আব্বা অনেক যত্ন করে সেটা রেকর্ড করে ফেললেন। রেকর্ড করা শুরুর আগে থেকে ভাষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় বলতে গেলে রীতিমত কার্ফু জারী থাকল। কোন রকম আওয়াজ করা গেল না। আব্বার ঘরের দরজা ভেজানো। আমরা পা টিপে টিপে এ ঘর থেকে ও ঘরে হেঁটে যাচ্ছি দরকার হলে। বাসায় কোন কিছু রেকর্ডিং এর সময় এমনটা করা আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তারপর যা হলো তা প্রত্যাশিতই ছিল। পরের দুদিন প্রায় বিরতিহীনভাবে ভাষণটা বাজানো হলো। কলোনি ছাড়াও শহরের অনেকে মানুষ ছোট ছোট দলে এসে শুনে গেল। এসব দেখে, কার পরামর্শে জানি না, আব্বা, সহকর্মী রাজ্জাক চাচা, আজিম চাচা এবং আরো কয়েকজন মিলে ওয়াপদার একটা পিকআপ আর টেপরেকর্ডারটা নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণটা মাইকে বাজিয়ে শোনাতে শুরু করলেন। পিক আপটা চালাতেন যে ড্রাইভার তাঁকে আমরা (সম্ভবত) হোসেন চাচা বলে ডাকতাম। তখন এধরনের যে কোন উদ্যোগ দ্রুত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্রসংগঠন এবং জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়ে যেত। সে এক অভূতপূর্ব আবেগের জোয়ার।
ভাষণটা বাজানোর পরে যা হতো, সে এক দেখার মতো দৃশ্য। লোকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনত আর ভাষণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে ছড়িয়ে পড়তো।
তখন মোবাইল ছিল না। টেলিভিশনও নেই বললেই চলে। শুধু রেডিও আর সংবাদপত্র। ঠাকুরগাঁতে আমরা পত্রিকা পেতাম পরের দিন। মনে হয় মার্চের ১১ বা ১২ থেকে শুরু হলো সেই ভাষণ শোনানো কোথায়, কখন, কোন দিন একেবারে যাকে বলে সময়সূচী ধরে। এর লক্ষ্য ছিল যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। বিশেষ করে হাটের দিন গুলোতে হাটে হাটে পিকআপে করে গিয়ে মাইকে ভাষণটা বাজিয়ে শোনানো। শহরে আমার যেসব বন্ধুর বাসা তারাও এই ভাষণ বাজানো শুনেছিল। তার মধ্যে আমার সহপাঠী বিদ্যুত (অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, এখন ঢাকায় থিতু), জুয়েল (দীর্ঘদিন এনজিওতে চাকুরি করে এখন লন্ডন প্রবাসী), আখতারুল (ঠাকুরগাঁও চিনিকলে চাকুরী শেষে এখন অবসর নিয়ে ওখানেই আছে) জানালো যে ওদের এটা মনে আছে। বিদ্যুৎ-এর অবশ্য তখন জানা ছিল না কারা ভাষণটা বাজিয়ে শোনাত। আর, জুয়েল কাছ থেকে দেখেছিল যে টেপ রেকর্ডটার দুটো স্পুল ছিল। আখতারুল জানালো যে, রওনা দেয়ার আগে আব্বাকে গাড়িতে টেপরেকর্ডটা বাজিয়ে পরীক্ষা করতেও দেখেছিল। সেটা অবশ্য আমারও কয়েকবার দেখা। হয়ত আরো অনেকের ভাষণটা, পিকআপটা বা সংশ্লিষ্ট কিছু মনে পড়ে যাবে। ভাষণ শোনানোর কাজটা শহরের চৌরাস্তা, গুদরিবাজার এবং কালীবাড়ির হাট ছেড়ে চলে গেল আশেপাশের হাটগুলোতে। আব্বাদের কথাবার্তা থেকে শোনা অনেক হাটের নাম আজও কানে বাজে। খোঁচাবাড়ি হাট, ফারাবাড়ি হাট,ভুল্লির হাট, গড়েয়া হাট, মাদারগঞ্জ হাট, ভাওলা হাট, আলাদিহাট, সালন্দর হাট, কবিরাজ হাট, সেনুয়া হাট, লোহাগাড়া হাট এবং পথের মাঝে কোথাও কোথাও মানুষজন জড়ো হয়ে ঘিরে ধরলে, সময় থাকলে সেখানেও বাজানো হতো সে ভাষণ। আমি নিশ্চিত না তবে মনে হয় এক দিন করে বালিয়াডাংগি, রুহিয়া ও পীরগঞ্জেও গিয়েছিলেন। ওখানকার পুরনো মানুষজন বলতে পারবেন। আব্বারা বের হতেন দুপুরের দিকে। কোন কোন দিন ফিরতে বেশ রাত হয়ে যেত। খেতে বসে তাঁরা যখন প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, আনন্দ ও বিশ্লেষণ নানাভাবে বলতেন তখন আমরাও দু’কান খাড়া করে গভীর মনযোগ দিয়ে সেসব শুনতাম। তার সবটুকু আমি বুঝতাম না। তাঁদের চোখে-মুখে থাকত এক অপার আনন্দ। মাঝে মাঝে কলোনির চাচারাও এসে সেই গল্প শুনতেন আর টেপ-রেকর্ডারের জন্য আব্বাকে ধন্যবাদ জানাতেন। অনেকের মধ্যে ছিলেন তালুকদার চাচা (তার সন্তান আমার সহপাঠি চিকিৎসক হিরু এখন সিঙ্গাপুরে), মালেক চাচা, শামসুল চাচা (তাঁর ছেলে জুয়েল এখন দিনাজপুরের কে বি এম কলেজের অধ্যক্ষ), জালাল চাচা, মোমেন চাচা, পাশের বাসায় থাকা শাহাবুদ্দিন চাচা ( তাঁর ছেলে লিতু আমার সহপাঠী ওয়াপদাতেই চাকরি করে এখন অবসরে), মনসুর চাচা আর টিকলি সেন কাকা (কাকার ছেলে আমার সহপাঠি শান্ত পরে ওয়াপদাতেই চাকরি করে এখন অবসরে) প্রমুখ।এই ভাষণ শোনানোর কাজ চলেছিল মার্চের শেষ পর্যন্ত।
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ক্রাক ডাউনের পর অবস্থা থমথমে হয়ে উঠলো। মার্চের মাঝামাঝি থেকেই অনেকেই পরিবারসহ কলোনি ছেড়ে যে যার মত গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছিল। ২৭ মার্চ দিবাগত মাঝ রাতে অনেক গোলাগুলি শুরু হলে আব্বা আমাদের সবাইকে মেঝেতে শুইয়ে দিলেন। পরেরদিন সকালে জানা গেল যে, বাঙালী ইপিআর সৈনিকরা বিদ্রোহ করেছে এবং ভোর হতে হতে পশ্চিম পাকিস্তানি যে সব সৈনিক ক্যাম্পে ছিল তাদের মেরে ফেলেছে। ইপিআর ক্যাম্পটা ছিল কলোনির ঠিক পশ্চিম দিকে লাগোয়া ঘাগরা নদীর ওপারে। পরের কদিন অনেক আশংকা, গুজব সারা শহর ঢেকে রাখলো। শহরের লোকজন গ্রামের দিকে সরে যেতে শুরু করেছিল আগেই। এরপরে ভাষণ শোনানোর জন্য আব্বারা আর বের হননি। দুদিন বাদেই আব্বা ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলেন আরেক কাজ নিয়ে। সে অন্য গল্প।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কলোনি বলতে গেলে একেবারে ফাঁকা। আব্বা যে কাজ, সে আরেক গল্প, শুরু করেছিলেন সেটা বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। কারণ, সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট অবরুদ্ধ করে রাখা ইপিআর, পুলিশ এবং জনগণ আর পেরে ওঠেনি যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাংক নিয়ে বের হল। ১৩ এপ্রিল আমরা আর শাহাবুদ্দিন চাচারা মানে আমার সহপাঠি লিতুরা ওয়াপদার একটা ল্যান্ডরোভারে প্রথমে পীরগঞ্জ ওয়াপদা কলোনি, তারপর আরও ভিতরে ভাকুরা গ্রামে আব্বার আরেক পরিচিত রাজ্জাক চাচার বাড়িতে চলে যাই।
সেখান থেকে মাসখানেক পর আবার সীমানা পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া। শরনার্থীর জীবন শুরু হলো। শুরুতে আমরা কিছুদিন ভারতের রায়গঞ্জে ছিলাম। তখন এক সময় আব্বাকে তাঁর শখের টেপ রেকর্ডারটা বেচে দিতে হয়েছিল পয়সার জন্য।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধ কত ভাবেই না তখন মানুষের মাঝে জীবনের আশা হয়ে জ্বলেছিল। এখন এতদিন পরে মনে হয়, আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার যে নির্দেশনা ৭ মার্চের ভাষণে ছিল, আব্বার এধরনের কাজ তারই একটি নমুনা। তখন মানুষ কত ভাবেই না সেই নির্দেশনা পালন করেছে, এখনকার পরিভাষায় যাকে বলে, সৃজনশীলভাবে। আমি নিশ্চিত যে, সেই সময় সারাদেশে যাদের বাসায় টেপরেকর্ডার ছিল তাদের অনেকেই ৮ মার্চ সকালে রেডিওতে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রেকর্ড করেছিলেন।
লেখক:
কাজী আব্দুর রহমান, শিক্ষক, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ স্কুল সোহার, ওমান