হামলাকারীদের ছদ্মনাম প্রকাশ করল আইএস

Comments

আইএস কোন প্রমান বা বিস্তারিত ছাড়াই শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের দায় প্রথমে স্বীকার করে। পরবর্তি সময়ে ৮ জনের শপথ বাক্য পাঠে একটি ভিডিও প্রকাশ করে কিন্তু সেখানেও কারও নাম বা বিস্তারিত ছিল না। অবশেষে ছবি সম্বলিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে হামলার বিস্তারিত বিবরণ হাজির হাজির করলো আইএস। খবর এশিয়া টাইমসের।

আমাক (AMAQ) নিউজ এজেন্সি নামের আইএস’র প্রচারণা এজেন্সি প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ‘হামলাকারী’দের পরিচয় হাজির করা হয়েছে। তারা কে কোথায় হামলা চালিয়েছে, তা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয় যে বিবৃতিতে ছবি দেওয়া হয়েছে ৮ জনের আর নামোল্লেখ করা  হয়েছে ৭ হামলাকারীর কারণ এই ৮ জনের দলে আবু মুখতার নামে ২ ব্যক্তি রয়েছে।

রয়টার্স বলছে যে আইএস এর ভিডিওতে মুখ খোলা যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে সেই ব্যক্তির নাম মহম্মদ জাহরান। এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রামাসিংহে মনে করেন যে এই জাহরান শ্রীলঙ্কার পূর্ব প্রান্তের তামিলভাষী এক উগ্রবাদী ধর্মীয় নেতা।

পুলিশ বলছে অতীতে বিভিন্ন সময় জেহাদের আহ্বান সম্বলিত ফেসবুক পোষ্ট দিয়েছে এই জাহরান। মহম্মদ জাহরান ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের (এনটিজে) সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেন বেশ কয়েকজন ইসলামী ধর্মীয় নেতা এবং তারা আগেও পুলিশ ও প্রশাসনকে জাহরান সম্পর্কে অবহিত করেছিল। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল যে তারা মনে করে এই হামলার সাথে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের (এনটিজে) এবং জমিয়াতুল মিলাদে ইব্রাহিম (জেএমআই) জড়িত রয়েছে।

আইএস’র দেওয়া এই বিবৃতিতে ৮ হামলাকারীর নামযুক্ত হামলার স্থানের যে বিবরণ দিয়েছে তা নিচে দেয়া হলো:

  • সেন্ট অ্যান্থনি চার্চ – আবু হামজা কলম্বো শহরের সেন্ট অ্যান্থনি’স চার্চে হামলা চালিয়েছে। ভিড়ের মাঝখানে গিয়ে নিজের গায়ে থাকা বিস্ফোরক ভেস্টটির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সে।
  • সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চ – আবু খলিল নোগোম্বো শহরে সেন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চে যায় এবং বিধর্মী আচার উদযাপনকারীদের ওপর বিস্ফোরক জ্যাকেট বিস্ফোরিত করে হামলা চালায়।
  • জিওন চার্চ – আবু মুহাম্মদ বাট্টিচালোয়ার জিওন চার্চে গিয়েছিল। সেখানে সে বিস্ফোরক বেল্ট দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
  • সাংগ্রি লা হোটেল – আবু উবাইদা শহরের সাংগ্রি লা হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। তার গায়ে থাকা বিস্ফোরক ভেস্ট বিস্ফোরিত করে হামলা চালায়।
  • সিনামন হোটেল – আবু বারা শহরের সিনামন হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এখানে সে তার গায়ে থাকা বিস্ফোরক ভেস্ট বিস্ফোরিত করে হামলা চালায়।
  • কিংসবারি হোটেল – আবু মুখতার শহরের কিংসবারি হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এখানেও সে তার গায়ে থাকা বিস্ফোরক ভেস্ট বিস্ফোরিত করে হামলা চালায়।
  • বাড়িতে বিস্ফোরণ – দেমাতাগোদা শহরে আব্দুল্লাহ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে সে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশের তিন সদস্যকে হত্যা করে।

বিবৃতিতে অষ্টম ব্যক্তি বা অপর ‘আবু মুখতার’ এর কার্যাবলি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

আইএস এর বিবৃতিতে যে নামগুলির উল্লেখ করেছে তা যে ছদ্ম নাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এদিকে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় ইংরেজী অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ফার্স্টপোষ্ট জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার ইষ্টার সানডে সকালে সংঘটিত আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলায় শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর দুই পুত্র আত্মঘাতী হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, মোহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম যিনি শ্রীলঙ্কার একজন বিশিষ্ট মসলা ব্যবসায়ীই নন তিনি বামপন্থী রাজনৈতিক দল জনতা বিমুক্তি প্যারামুনার সাথে সম্পৃক্ত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার দুই ছেলে ইমসাথ আহমেদ ইব্রাহিম (৩৩) এবং ইলহাম আহমেদ ইব্রাহিম (৩১) সিনেমন গ্রান্ড এবং শাংগ্রি লা হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিচালনা করে।

তদন্তকারীদের ঘনিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ফার্ষ্টপোষ্ট বলেছে যে ইব্রাহিম পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র ইসমাইল আহমেদ ইব্রাহিম পলাতক রয়েছে, তাকে আটক করা গেলে এই আত্মঘাতী দলটির কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে যে ইসমাইল গতবছরে বৌদ্ধ মন্দির ও চার্চ ক্রস ধ্বংস করার সাথে যুক্ত। ওয়ানাউলুয়ায় ইসমাইল ইব্রাহিম ও সহযোগীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এই জঙ্গি দলটিই মার্চ, ২০১৯, এ ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের স্পষ্ট সমালোচনাকারী সরকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজ্জাক তসলিমকে হত্যার সাথে জড়িত।

এ পর্যায়ে পুলিশ মোহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম ও তার তৃতীয় পুত্র ইজাস আহমেদ ইব্রাহিম (৩০) কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী দল।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা রুয়ান বিজয়াবর্ধন বুধবার জানান, হামলাকারী ছিল ৯ জন যাদের মধ্যে একজন নারী। ৯ জনের অপর একজন যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষা শেষে শ্রীলঙ্কায় বয়াস করছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি।

ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে বলছে, “কলম্বোয় শাংগ্রি লা হোটেলে যে দুই আত্মঘাতী বোমারু হামলা চালিয়েছিল, তারা দুই ভাই বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বয়স কুড়ির ঘরে। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, তারা তাদের ‘পারিবারিক সেল’ থেকেই সক্রিয় ছিল। কলম্বোতেই তাদের বাড়ি। মশলা রফতানির ব্যবসায় জড়িত ছিল তারা। দুই ভাইয়ের এক জন হোটেলে ঢোকার সময়ে ভুয়ো পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু অন্য জন আসল ঠিকানাটাই লিখেছিল। সেটাই তদন্তে বড় সূত্র হিসেবে উঠে এসেছে। এ দিন যখন বিশেষ টাস্ক ফোর্স ওই বাড়িতে হানা দেয়, এক ভাইয়ের স্ত্রী বোমা ফাটিয়ে দুই শিশু-সহ নিজেকে শেষ করে ফেলে। তিন জন পুলিশও মারা যান। তদন্তকারীরা পরে বলেন, একটা পরিবার নিজেরা মিলেই একটা জঙ্গি সেল চালাচ্ছিল। আত্মীয়স্বজনদের কাউকে কাউকে ব্যাপারটা জানিয়েওছিল। ‘‘বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীদের দ্বারাই এরা অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রত্যক্ষ যোগ কতটা ছিল, তা স্পষ্ট নয়।’’ এ দিকে আইএস মুখপত্র আমাক হামলার দায় নেওয়ায় তাদের সঙ্গে এই পরিবারের কী ভাবে কতটা যোগাযোগ ছিল বা আদৌ ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে থেকে দেখা গিয়েছে, সন্দেহভাজন আর এক বোমারুর ছবি। শার্ট-প্যান্ট চটি পরা এক যুবক ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢুকছে সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে। তার আগে সে একটি বাচ্চা মেয়েকে পিঠে চাপড় দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে রাস্তা পেরোতে এগিয়ে যায়।”

বাঙালীয়ানা/এসএল

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.