৯ জুন, ১৯৭১
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ দুটি প্রতিনিধি দল পাঠালো ঢাকায়। দলের সদস্যরা উঠেছে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ বুঝলেন এই সময়ে যদি ঐ হোটেলে গেরিলা অপারেশন চালানো যায় তবে তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং পাক হানাদারদের দর্পচূর্ণ করবে। নির্দেশ দিলেন অপারেশনের। বললেন হোটেলের ৬ থেকে ৮ মাইলের মধ্যে গ্রেনেড আক্রমণ করতে। মূলত ঢাকায় ক্র্যাক প্লাটুন পরিচালিত এটাই প্রথম গেরিলা অপারেশন – ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল – হিট এ্যান্ড রান’।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা
অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আশেপাশের নীরবতা ভেদ করে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে উঠল। ময়মনসিংহ রোড ধরে পাক আর্মির গাড়ির পেছনে আসছে আরো তিনটি গাড়ি।
ততক্ষণে মুনির চৌধুরীর (শহীদ বুদ্ধিজীবী) শ্যালক এফডিসির ক্যামেরাম্যান মুনির আলম মির্জা বাদল, যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন, দ্রুত ইউ টার্ন নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গেটের সামনে ফুটপাতের পাশে গাড়ি রাখলেন। এদিকে অতিথিদের আগমনের অপেক্ষায় দেয়ালের ওপর বসে থাকা পাজামা-পাঞ্জাবি-টুপি পড়া পাকিস্তানী হায়েনাদের এদেশিয় দালালেরা অতিথিদের উদ্দেশ্যে হাততালি দিতে লাগল। ফলে ওরা নীল ডাটসন গাড়িটা আর চারজন মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতি টেরই পেল না।
তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল হক স্বপন আর তাদের দলনেতা ২১ বছরের তরুণ হাবিবুল আলম প্রস্তুত ৩ জন তিনটি করে গ্রেনেড হাতে নিয়ে ৩-৪ ফুট দূরে দূরে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কামরুল হক স্বপন তার শার্টের আড়ালে পিস্তল ধরে দাঁড়ালেন। প্রথম গ্রেনেড ছুঁড়লেন জিয়াউদ্দিন। অতিথি বহনকারী গাড়িটা একটু লাফিয়ে উঠলো। তারপর আলম আর মায়া পরপর গ্রেনেড ছুঁড়লেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোঁড়া একেরপর এক গ্রেনেডে প্রকম্পিত হলো পুরো এলাকা।
একদিকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য, অন্যদিকে দেশমাতৃকার মুক্তির শপথে বলীয়ান অত্যাচারিত নিপীড়িত বাঙালী কিছু যুবক। পাকিস্তানীদের সশস্ত্র পাহারা ডিঙিয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সর্বাধিক নিরাপত্তা বেষ্টিত হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সফল আক্রমণ চালিয়েই অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে ফিরেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
অপারেশন করার কথা ছিলো ইন্টার কন্টিনেন্টালের আশেপাশের এলাকায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা হোটেল ইন্টাকন্টিনেন্টালে আক্রমণ করে সাফল্য অর্জন করায় বিস্মিত হয়েছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং ক্যাপ্টেন হায়দারও।
তথ্য সূত্র: গেরিলা ১৯৭১
বাঙালীয়ানা/এসএল
অগ্নিঝরা একাত্তরের দিনগুলো, পড়ুন –
জুন ১৯৭১
মে ১৯৭১
এপ্রিল ১৯৭১
মার্চ ১৯৭১