স্বাধীনতা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সংঘটিত স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী ১১-দফা ছাত্র আন্দোলন ও তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারী শহীদ আসাদ দিবস ও ২৪ জানুয়ারী গণঅভ্যুত্থান দিবস একটা দেশ ও জাতির রূপ কাঠামো বদলে দিতে এক মহান ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু তার ঐতিহাসিক পটভূমি ও সমসাময়িক রাজনৈতিক মেরুকরণ সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধির অভাবজনিত কারণে বিভিন্ন লেখকের আবেগপ্রসূত লেখায় কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন পরে সে সবের অপনোদন করার কাজটাও তাই খুবই দুরূহ। তবুও চেষ্টা করব নির্মোহ একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেদিনের উত্তাল দিনগুলির একটি পর্যালোচনা তুলে ধরতে।
স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের একদশক পূর্তি উপলক্ষে পাকিস্তানের সর্বত্র যখন মহা সমারোহে উন্নয়নের দশক পালিত হচ্ছিল তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই এই তথাকথিত লৌহমানবের জন্য এক শোচনীয় পরিণতি ঘনিয়ে আসছে।
১৯৬৫ সাল। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তথা পাকিস্তানের জন্য বছরটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। এ বছরেই ২ জানুয়ারী আইয়ুব খান তার Basic Democracy অর্থাৎ মৌলিক গণতন্ত্র (যা না ছিল মৌলিক না ছিল গণতন্ত্র) পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহকে বিশাল কারচুপির ভোটে পরাজিত করে নিরঙ্কুশভাবে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। বিরাট বিজয়োল্লাসে তার কনভেনশন মুসলিমলীগ বাহিনী সারাদেশে তাদের নির্বাচনী জয় ডংকা বাজাতে শুরু করে, অপরদিকে আইয়ুবের ক্ষমতা গ্রহণের এক দশককে উন্নয়নের স্বর্নোজ্জ্বল দশক হিসাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকে। ঠিক এই বছরটির ৬ সেপ্টেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এক নিদারুণ অশনি সংকেত হিসাবে নেমে আসে পাকিস্তানের রাজনৈতিক গগণে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের ব্যক্তিজীবনে।
১৭ দিনের এই যুদ্ধে উভয়পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়; কিন্তু সেই সাথে পাকিস্তানের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে এক চরম অস্থিরতা ও ব্যাপক দৃশ্যপট পরিবর্তনের সুস্পষ্ট আবহ সৃষ্টি হয়। একদিকে আইয়ুবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলফিকার ভুট্টো সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় উজবেক রাজধানী তাসখন্দে স্বাক্ষরিত ইন্দো-পাক যুদ্ধ বিরতি ও শান্তিচুক্তির চরম বিরোধীতা করে প্রয়োজনবোধে এক হাজার বছর যাবৎ ঘাস খেয়ে হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সংকল্প ঘোষণা করেন। আর অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ স্পষ্টতই উপলব্ধি করে যে ১৭ দিনের এই যুদ্ধকালে তারা কতই অরক্ষিত ও অসহায়ভাবে দিনযাপন করেছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ ছিল তখন নিদারুণভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত। স্বাভাবিকভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্বশাসন তথা স্বাধিকারের দাবীর সাথে সাথে সার্বিক রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে পূর্ব পাকিস্তানের যথাযোগ্য অংশীদারিত্বের প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে আলোড়িত করে। বস্তুতপক্ষে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের যে বীজ বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে রোপিত হয়েছিল, অচিরেই তা পুস্প-পল্লবে বিকশিত হয়ে এক মহা মহীরূহের রূপধারণ করতে শুরু করে।
আমরা যদি সেই গোড়া থেকে হিসেব করে দেখতে চেষ্টা করি তাহলে দেখবো পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান তথা এই ভূখন্ডের মানুষ কখনোই সমানাধিকার বা স্বাধিকার ভোগ করেনি। শোষণ-বঞ্চনা, জুলুম-নির্যাতন ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। আর এসবের বিরুদ্ধে বার বার রুখে দাঁড়িয়েছে বাংলার মানুষ। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয় ও তৎপরবর্তীতে সাতান্ন সালের কাগমারী সম্মেলনে পূর্ববাংলার পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের যুগান্তকারী প্রস্তাবনা- যার অমোঘ বিকল্প হিসাবে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আসসালামালাইকুম ঘোষণা- এ সবই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের এককেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে এই ভূখন্ডের মানুষের সুস্পষ্ট চেতনার রায়। দুর্ভাগ্য যে স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধিকারের এই দাবীর উদ্যোক্তা মওলানা ভাসানী এবং এ দেশের বামপন্থী প্রগতিশীল শক্তি তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তীকালে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। জাতীয় মুক্তি প্রশ্নের গুরুত্ব ও প্রাধান্যকে অবহেলা করে আন্তর্জাতিক প্রশ্ন, তথা সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের বিশ্বজোড়া শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয় এবং সেটাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। ঠিক এমনি একটি পটভূমিতে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারতযুদ্ধের অব্যবহিত পরে শেখ মুজিবুর রহমান যখন তাঁর ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচী উপস্থাপন করেন বাংলার মানুষ তখন তাদের মুক্তি সনদ হিসাবে সেটাকে বরণ করে নেয়। কিন্তু যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী অনুসিদ্ধান্ত হিসাবে দেশ জোড়া নেমে আসতে থাকে একের পর এক নিবর্তন ও নির্যাতনমুলক আইনের খড়গ। ডিপিআর (ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস্) এর অক্টোপাস বন্ধনে আবদ্ধ হতে থাকে শত শত দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিককর্মী ও নেতৃবৃন্দ।
৬ দফা দাবীর ভিত্তিতে সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কেউই সেদিনের স্বৈরশাসনের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি। সারাদেশে নেমে আসে এক নিদারুণ নৈরাশ্য ও হতাশা। কবরের নিস্তব্ধতায় যেন ছেয়ে যায় সারা দেশ।
এই রাজনৈতিক স্থবিরতা ও হতাশা কাটাতে সেদিনের ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ ১১-দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। কিন্তু সেই ঐক্যও একদিনে গড়ে উঠেনি। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (উভয় গ্রুপ) ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতারা- সকলেই নিজ নিজ দলীয় সংকীর্নতা ও কুপমন্ডুকতায় আচ্ছন্ন। একদিকে ছাত্রলীগ ৬-দফা ছাড়া কোনো কর্মসূচিকেই গ্রহণ করতে নারাজ – অপরদিকে ছাত্র ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবিরোধী, মেহনতী মানুষের শ্রেণীগত স্বার্থের অনুকূল কর্মসূচি ছাড়া কোনো আন্দোলনে শরীক হতে অনাগ্রহী। অবশেষে ৬-দফা কথাটির উল্লেখ না রেখে এর সবগুলো দফা সন্নিবেশিত করে এবং পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল, সিয়েটো-সেন্টো ত্যাগ করা সহ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কতিপয় দাবি জুড়ে দিয়ে, সর্বোপরি শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে রচিত হয় ঐতিহাসিক ১১-দফা কর্মসূচি। ঊনসত্তরের ৪ জানুয়ারী ছাত্র নেতৃবৃন্দ এই ঐতিহাসিক দলিলে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরকারী ছাত্র নেতাদের মধ্যে ছিলেন: পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)-এর সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার ও সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপা দত্ত (উল্লেখ্য যে এই সময়ে একটি মিথ্যা মামলায় সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ হুলিয়ার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কিছুদিন আত্মগোপন করে ছিলেন), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)-এর সভাপতি সাইফউদ্দিন মানিক ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন (এন.এস.এফ)-এর সভাপতি মাহবুবুল হক দোলন ও সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল। ৪টি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমন্বয়ে এই ৮ জন ছাড়াও ডাকসুর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যথাক্রমে তোফায়েল আহমেদ ও নাজিম কামরান চৌধুরীও এই ১১-দফা কর্মসূচীতে স্বাক্ষর করেন এবং তাঁদের নিয়ে গড়ে উঠে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। একটা কথা এখানে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামোতে কখনই কোনো কনভেনর বা আহবায়ক ছিল না। ডাকসুর সহ-সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কেবলমাত্র পদাধিকার বলে এবং সর্বদলীয় ব্যক্তিত্বের মর্যাদায় কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরূপে পরিগনিত হতেন।
ভাবতে অবাক লাগে পরবর্তীকালে ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদকে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে চিহ্নিত করে কোনো কোনো লেখক পরবর্তীকালে প্রবন্ধ লিখেছেন। তোফায়েল নিজেও অনেক টেলিভিশন টকশো অথবা তাঁর নিজের লেখা নিবন্ধে পরিষ্কার করে বলেছেন যে ৪টি ছাত্র সংগঠনের আলোচনা সভার সিদ্ধান্তসমূহ ডাকসুর সহ-সভাপতি হিসাবে আমার মুখ থেকে ঘোষিত হোত সবসময়। তাঁর এই অকপট স্বীকারোক্তি ও সততা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।
যা হোক অবশেষে, ১৭ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় সাধারণ ছাত্রসমাজের সামনে এই কর্মসূচি পেশ করা হয়। শুরু হয় বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত সারাদেশে ছাত্র জনতার মিছিল আর উচ্ছ্বাস। মনে পড়ে ২০ জানুয়ারী ছাত্র জনতার এক বিশাল মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যাালয় থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের উদ্দেশ্যে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন মিছিলের মাঝামাঝি স্থানে শুরু হয় পুলিশের আক্রমণ। মেডিকেল কলেজের এমার্জেন্সী বিভাগ ছাড়িয়ে চাঁন খা পুলের কাছাকাছি স্থানে পুলিশের গুলিতে শাহাদাৎ বরণ করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের বিশিষ্ট নেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মিছিলের অগ্রভাগ তখন বাহাদুর শাহ পার্কের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গুলির খবর পেয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের পূর্ব নির্ধারিত ছাত্র-জনসভা ফেলে রেখে আমরা সবাই ছুটে এলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। পরবর্তী তিনদিন আমরা সারাদেশে সর্বাত্মক প্রতিরোধ ও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলাম। সারা বাংলাদেশে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো বিদ্রোহের আগুন। আর সে আগুনে যেন ঘৃতাহুতি দিল ২৪ জানুয়ারী পুলিশের গুলিতে নবকুমার ইনষ্টিটিউশনের নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউরের মৃত্যু। এরপরের স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পতন একান্তই অবধারিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু ইতিহাসের রেকর্ডকে নির্ভুল রাখতে এ প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে বাংলার মানুষকে হতাশা আর নৈরাশ্যের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করতে সেদিন আর এক মহান নেতা বলিষ্ঠ পদভারে এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ভাসানীর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার লাট-ভবন (আজকের বঙ্গভবন) ঘেরাও ও পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে হাট-হরতালের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের মেজাজ ফিরে পেয়েছিল বাংলার মানুষ। আজ যখন সেটাকে ভুলে যাওয়া অথবা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়ার একটা অপপ্রয়াস কখনও কখনও দেখতে পাই তখন মনটা বিষাদ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।
একইসাথে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে আমাদের দ্বিধা বা সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। তা হলো প্রায় একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে রাওয়ালপিন্ডি গর্ডন কলেজের কিছু ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তার প্রতিবাদে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। মিছিলকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে দু’জন ছাত্র নিহত হন এবং প্রচুর সংখ্যক ছাত্র আহত হন। উত্তাল হয়ে উঠে সারা পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লাহোর, কোয়েটা, করাচীসহ সর্বত্র ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। এমনকি মা-বোনেরাও এই আন্দোলনে শরীক হন। পশ্চিম পাকিস্তানে তদানীন্তন ছাত্র-যুবনেতা ও পরবর্তীকালে মন্ত্রী জনাব মিরাজ মোহাম্মদ খানের কাছে শুনেছি, রাওয়ালপিন্ডিতে যখন সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা রাইফেল তাক করে মহিলাদের মিছিলের দিকে ধেয়ে আসে মহিলারা গর্জে উঠে জওয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেন: ইয়ে বাচ্চো, কেয়া তোম গোলি চালায়গা হামপর? তোম কো দুধ নেহি পিলায়া হাম? আভি ডাল দো তোমহারা রাইফেল, আওর পানি পিলাও হামকো। বস্তুত:পক্ষে আইয়ুবের আসল ক্ষমতার ভিত (Power Base) সেদিন থেকেই নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারী লাহোর ও করাচী শহরের সর্বত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। লাহোরে কার্ফিউ জারী করা হয়। তৎসত্ত্বেও কোহিস্তান পত্রিকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়। ২৮ জানুয়ারী পেশাওয়ার শহরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। সেদিনের পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনকে কেবলমাত্র লান্ডিকোটালের স্মাগলিং-মাফিয়াদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করে যদি কেউ মূল্যায়ন করতে চান তাহলে ভুল করা হবে।
এদিকে ঢাকায় ১৯৬৯-এর ২৪ জানুয়ারীর পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে থাকে। ২৪ জানুয়ারী দিনটি ছিল শুক্রবার। দুপুরের দিকে ১ ডিআইটি এভিনিউতে অবস্থিত দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলিম লীগের অফিস ও পেট্রোল পাম্পে জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। ঐদিন সেনাবাহিনীর গুলিতে সেক্রেটারিয়েটের সামনে প্রথম মৃত্যুবরণ করে রুস্তম। এরপরে গুলিতে নিহত হয় নবকুমার ইনষ্টিটিউশনের নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর। অচিরেই সমগ্র নগরী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দুপুরে পল্টন ময়দানে জানাজা শেষে লক্ষাধিক লোকের মিছিল পুরনো ঢাকার পথ অতিক্রম করে এসে পৌঁছে ইকবাল হলের মাঠে। এখানে অনুষ্ঠিত জমায়েতে বক্তৃতা করেন মতিউরের পিতা। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘোষণা করেন ‘এক মতিউরকে হারিয়ে আজ আমি হাজার মতিউরকে পেয়েছি।’ সেদিন টহলদানকারী সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ঢাকায়, আদমজীনগরে পুলিশের গুলিবর্ষণে এবং নারায়নগঞ্জে ছাত্র-জনতার উপরে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও ব্যাটন চার্জে ২ জন নিহত এবং তোলারাম কলেজের কয়েকজন অধ্যাপকসহ কমপক্ষে ৩০ জন ছাত্র আহত হয়। খুলনার দৌলতপুর ও খালিশপুরে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও বহু আহত হয়।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সরকার সান্ধ্য আইন জারী করে এবং সেনাবাহিনী তলব করে। সন্ধ্যায় যুগপৎ এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে গভর্নর মোনায়েম খান ঘোষণা করেন, বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে এবং শহরের নিয়ন্ত্রণভার সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও ঘোষণা করেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকবে।
২৫ জানুয়ারী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ২৬, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বাসগৃহে ও যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মাধ্যমে ছাত্র গণহত্যার প্রতিবাদে শোক ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এরপর অতি দ্রুতলয়ে সময় এগিয়ে চলে এবং ছাত্র-জনতার মিলিত সংগ্রাম বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মত সকল বাধার বিন্ধ্যাচল ভাসিয়ে নিয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পতন অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। ১৯৬৯-এর ১ ফেব্রুয়ারী আইয়ুব খান এক বেতার ভাষণে ঘোষণা করলেন শীঘ্রই তিনি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। তাঁর এই ঘোষণায় একটি সম্ভাব্য গোলটেবিল বৈঠক সম্পর্কে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে। তাঁদের অনেকেই তখনো কারাগারে বন্দী। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নেতৃবৃন্দকে জেলে রেখে কোনো আলাপ আলোচনা হতে পারে না। আইয়ুব খান প্রস্তাব করেন, ১৭ ফেব্রুয়ারী সোমবার, ১৯৬৯ তিনি পিন্ডিতে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। কিন্তু ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটির অনুরোধে আইয়ুব খান ১৯ ফেব্রুয়ারী, বুধবার, বৈঠকের তারিখ পুন:নির্ধারণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন এবং যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের মধ্যে ছিলেন: মওলানা ভাসানী (ন্যাপ), জুলফিকার আলী ভুট্টো (পিপলস পার্টি), এয়ার মার্শাল আসগর খান (অবসর প্রাপ্ত), লে. জে. আযম খান (অবসর প্রাপ্ত), সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ (প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, ঢাকা হাইকোর্ট) এছাড়াও পাকিস্তান মুসলিম লীগের পক্ষে মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা, খাজা খয়ের উদ্দীন, পাকিস্তান জমিয়াতুল উলেমা-ই-ইসলামের পক্ষে মুফতি মাহমুদ, পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া, পাকিস্তান আওয়ামী লীগ (৮ দফা) এর পক্ষে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান ও আবদুস সালাম খান, পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ও মওলভী ফরিদ আহমেদ, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পক্ষে ওয়ালী খান ও মোজাফফর আহমদ, পাকিস্তান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের পক্ষে নুরুল আমিন ও হামিদুল হক চৌধুরী, পাকিস্তান আওয়ামী লীগ (৬ দফা)-র পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান এর পক্ষে মওলানা আবুল আলা মওদুদী ও অধ্যাপক গোলাম আযমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তখন পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দী এবং তাঁর ও অন্যান্য অভিযুক্তের বিচার চলছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর স্থাপিত বিশেষ আদালতে।
ইতিমধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, শেখ মুজিব প্যারোলে পিন্ডি যাবেন। মওলানা ভাসানী তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেন। গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের প্রশ্ন নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদেও প্রচন্ড প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এ সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের একটা অংশ, বিশেষ করে সিনিয়র আওয়ামী লাগ নেতা খোন্দকার মোশতাকসহ কেউ কেউ প্যারোলে শেখ মুজিবুর রহমানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের যথার্থতা নিয়ে অনেক সাফাই গাইতে শুরু করেন। এমন কি, খোন্দকার মোশতাক তাঁর আগা মসিহ লেনের বাড়ীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। সাইফুদ্দিন মানিক, তোফায়েল আহমদসহ আমরা কয়েকজন সেখানে যোগদান করি। বিপুল ভুরিভোজের সঙ্গে প্যারোলে মুজিবের গোলটেবিলে যোগদানের সারবত্তা সম্পর্কে একরাশ যৌক্তিকতা গলাধ:করণ করে ইকবাল হলে ফিরে এসেই আমরা ঘোষণা করি: মুজিব কেবলমাত্র মুক্তমানব হিসাবেই গোলটেবিল বৈঠকে যাবেন- অন্যথায় নয়। প্যারোলের শর্ত মেনে মুজিবকে আমরা গোলটেবিলে যেতে দেব না। এ সময়ে বেগম ফজিলাতুননিসা মুজিবও একটি বিশেষ প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করেন। স্বামীর সঙ্গে প্রিজন সেলে যোগাযোগ করে তিনি তাঁকে প্যারোলে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে কঠোর বিরোধীতা করেন।
স্পষ্টতই গোলটেবিল বৈঠক তখন ভন্ডুল হবার পথে। কারণ মুক্ত মানব হিসাবে মুজিবকে গোলটেবিলে যেতে হলে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা অপরিহার্য। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির পক্ষে যা ছিল সেদিন অবিশ্বাস্য ও অলঙ্ঘনীয়। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটিই অবশেষে ঘটলো। মুজিবকে মুক্তি দিয়ে আলোচনা টেবিলের বসাবার স্বার্থে গোটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটিই তুলে নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী দুপুরে শেখ মুজিবর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সকলেই মুক্তি লাভ করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব এক বিশেষ নির্দেশনামা জারী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ঘোষণা করেন। রাজধানী ঢাকাসহ প্রদেশব্যাপী বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো জনতার বিজয় মিছিল শুরু হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে ইকবাল হলে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় পরবর্তী দিনের সংবর্ধনা সভার প্রস্তুতি, প্রস্তাবাবলী, ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, সেখানে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিনিধিবৃন্দের কেউই কিন্তু কোনো প্রস্তাব দেননি যে এই জনসভা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করতে হবে। আমি মনে করি বাঙ্গালী জাতির একজন মহান নেতা, যিনি নিজের জীবন বাজী রেখে দেশমাতৃকা তথা বাঙ্গালী জাতির স্বাধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম, সামরিক আদালতের সম্ভাব্য মৃত্যুদন্ডাদেশ উপেক্ষা করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বীর সিপাহসালার রূপে নিজ আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁকে যে কোনো উপাধিতে ভূষিত করতে দ্বিধা বা মতানৈক্য হবার কথা ছিল না। অথচ কোনো আলাপ আলোচনা ছাড়াই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে জনাব তোফায়েল আহমেদ তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদানের কথা ঘোষণা করেন এবং স্বত:স্ফুর্ত জনতা দু’হাত তুলে সেটাকে সমর্থন করে। কিন্তু ছাত্রলীগের এই Big Brother Chauvinism-এর মানসিকতা ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পরবর্তী কর্মসূচীগুলির মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও সমঝোতার ক্ষেত্রে একটু একটু করে চিড় ধরতে শুরু করে। সেই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সারা প্রদেশব্যাপী ছাত্র জনসমাবেশ ও গনসংযোগ কর্মসূচী পালন করা হবে। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ৪টি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রদেশের ৪টি অঞ্চল সফর করবেন। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, তদানীন্তন ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের জিলা সদর সমূহে ছাত্র-জনসভার কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। আমি নিজে দক্ষিনবঙ্গের কর্মসূচীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে পৌঁছাই। কিন্তু যশোর ঈদগাহ ময়দানের জনসভায় তুমুল হট্টগোল ও পরস্পর বিরোধী শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। সন্ধ্যাবেলা আমরা সকলে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব মশিউর রহমানের বাসভবনে চা-পানে মিলিত হয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির একটি আশু সমাধান বের করতে সক্ষম হলাম। কিন্তু পরদিন খুলনা হাদিস পার্কের জনসভায় ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ন্যাপ নেতা এডভোকেট জব্বার সাহেবের বাসায় আবার মীমাংসা বৈঠকে মিলিত হলাম। কিন্তু পারস্পরিক দুরত্ব ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকলো।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন জিলা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা খবর পাঠাতে থাকে যে ছাত্রলীগ এককভাবে বিভিন্নস্থানে ছাত্র জনসভা করতে শুরু করেছে এবং তারা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাজে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। বস্তুত: ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে।
লেখক:
মোস্তফা জামাল হায়দার, ঊনসত্তরের ছাত্র নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য