১১ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
এদিনও সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন মুক্তিকামী মানুষ।
শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বিপুল প্রস্তুতির তীব্র প্রতিবাদ জানান।
টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী শেখ মুজিব ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান সাতকোটি বাঙালীর নেতা, তার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই একসাথে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনরকম বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে”।
তাজউদ্দীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, জনগণের অসহযোগ আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছেছে। জনগণের এই আন্দোলন সফল করতে অর্থনৈতিক কাজে নিয়োজিত সবাইকে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু নির্দেশনাও দেন।
ঢাকাস্থ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শেখ মুজিব তার কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সমরসজ্জায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় বাংলার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্যে তার “প্রাণ কাঁদিতেছে” উল্লেখ করে বলেন যে পাকিস্তান রক্ষা ও শান্তি স্থাপনের জন্যে তাদের দুজনের উপর যে দায়িত্ব রয়েছে তা সাধ্যমত পালনের লক্ষ্যে তিনি ঢাকায় শেখ মুজিবের সাথে আলোচনায় বসতেও রাজি আছেন।
আসগর খান করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য আর মাত্র কয়েকটি দিন হাতে রয়েছে এবং ঢাকায় যদি সৈন্যরা আর একটি গুলি চালায় তাহলে পাকিস্তান শেষ হয়ে যাবে”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক সভায় মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন জানানো হয়।
গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের একদিনের বেতন আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গণহত্যার প্রতিবাদে চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর পাকিস্তান সরকারের এক চিত্রপ্রদর্শনীতে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি তিনি দেশের চিত্রশিল্পীদেরও যোগদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
জনতার বাধার মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহ। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরে ও এধরনের ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা কারাগার থেকে পালাতে গিয়ে এদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৩ কয়েদী। অন্যদিকে বরিশাল কারাগার ভেঙে ২৪ কয়েদী পালিয়ে যায় এবং এ সময় ২ কয়েদী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমরাস্ত্রসহ ১০ মার্চ একটি জাহাজ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর করে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদে’র চার ছাত্রনেতা জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণীর বাঙালী কর্মচারীরা অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
বাঙালীয়ানা/এসএল