১২ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
শেখ মুজিব ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন সরকারি আধাসরকারি কর্মচারিদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানোর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে।
লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, দোষ করা হল লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।
লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি.আর. আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভূট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভূট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতা লিপ্সাই রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামে শেখ মুজিবের নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।
পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের বাঙালী আমলারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা আন্দোলনে অর্থের যোগান দিতে তাদের একদিনের বেতন দেয়ার ঘোষণা দেন।
প্রতিদিনের মতো এদিনও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ফরওয়ার্ড স্টুডেন্ট ব্লক ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরে মিছিল-সমাবেশ করে।
শিল্পী কামরুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভাতে বাংলার চির পরিচিত শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান।
চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
শিল্পী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে এ দিন ‘চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরুদ্দিন তার পাকিস্তানি খেতাব বর্জন করেন।
প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচী প্রেরণের ঘটনায় উৎকন্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
বগুড়া জেলখানা ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ জন কয়েদী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।
বাঙালীর উপর বিহারীদের হামলা ও সেনাবাহিনীর একতরফাভাবে বিহারীদের পক্ষ অবলম্বনের প্রতিবাদে সারা চট্টগ্রাম শহরে মিছিল বের হয়। চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের জরুরী সভা ডাকা হয়। সভায়, সবাইকে সংযম রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়।
বিকেলে চট্টগ্রামে শিক্ষাবিদ আবুল ফজলের নেতৃত্বে শান্তি মিছিল বের হয়।
বাঙালীয়ানা/এসএল