১৪ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
বাঙালীর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অসহযোগের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গশগ্রহণে এগিয়ে চলেছে।
আগের দিন জারিকৃত সামরিক বিধি নং ১১৫ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও এদিন শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমরা প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্তুত। … আমি জনগণকে যে কোনো ত্যাগের জন্যে এবং সম্ভাব্য সব কিছু নিয়ে সে কোনো শক্তির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই”।
করাচিতে এক জনসভায় জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, সাংবিধানিক সমঝোতার পূর্বে ক্ষুতা অর্পণ করার ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিমের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সমূহের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
ঢাকায় ন্যাপ (ওয়ালী) প্রধান ওয়ালী খানের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ধানমন্ডি ৩২ এ মুজিবের বাসভবনে রুদ্ধদ্বার প্রায় দেড় ঘন্টার এ আলোচনাকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন আওয়ামী নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবন-যাপনের জন্যই আমাদের সংগ্রাম।
এদিন আওয়ামী লীগের পক্ষে তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন পরিচালনায় ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে ১১ মার্চ খাদ্যবাহী জাহাজ ‘ভিটেজ হরাইজন’ এর গতিপথ চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তে করাচী বন্দরে পরিবর্তনের ঘটনা সম্পর্কে অবিলম্বে তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবি জানান।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পাকিস্তান সরকারের দেয়া ‘হেলাল-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব বর্জনের ঘোষণা দেন।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রদেশের সম্পদ পাচার রোধে শহরে কয়েকটি চেকপোষ্ট স্থাপন করে।
ছাত্র ইউনিয়ন এদিন আবারও একটি মশাল মিছিল বের করে।
জাতীয় লীগ নেতা আতাউর রহমান খান অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে আহ্বান জানান।
সংবাদপত্রগুলো বাংলায় “আর সময় নাই” এবং ইংরেজিতে “Time is running out” শিরোনামে যৌথ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।
চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ সারা শহরে মিছিল করে। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের এই মিছিল জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে সারা চট্টগ্রাম শহর।
বিকেলে চকবাজারের উর্দুগলিতে মিছিলে হানা দেয় বিহারী ও জামাতীরা। সাতজন বাঙালী গুরুতর আহত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়ার পথে দুজন মারা যায়।
রাতে উত্তেজিত মুক্তিকামী মানুষরা উর্দুগলিতে আক্রমণ করে। বিহারী-জামাতীদের সাথে বাঙালীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
বাঙালীয়ানা/এসএল