১৭ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
ষোড়শ দিনের মত অসহযোগ আন্দোলনের সভা, সমাবেশ, মিছিলে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারা দেশ।
শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার দ্বিতীয় দফা আলোচনা এদিন মাত্র এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। শেখ মুজিব কালো পতাকা শোভিত সাদা গাড়িতে চড়ে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন এবং ১১টা ৬ মিনিটে বের হয়ে আসেন। শেখ মুজিব গাড়ি থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেখুন আমার বলার কিছুই নাই। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আবার আলোচনায় মিলিত হবো। পরবর্তী দফা আলোচনা কখন অনুষ্ঠিত হবে তার সময় এখনো নির্ধারণ হয় নাই। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং লক্ষ্যে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে’।
এরপর শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ধানমন্ডির বাসভবনে ফিরে দলীয় হাই কমান্ডের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। তিনি দলীয় হাই কমান্ডকে প্রেসিডেন্টের সাথে তার আলোচনা সম্পর্কে অবহিত করেন এবং সেই আলোকে পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে এদিন ইয়াহিয়ার সঙ্গে পাকিস্তান থেকে ঢাকা আগত সাবেক কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী মি. কর্নেলিয়াস ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি মেজর জেনারেল ওমর প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্টের চিফ স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল পীরজাদার সাথে এক আলোচনায় মিলিত হন।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান খান আব্দুল ওয়ালী খান ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে একঘন্টা স্থায়ী আলাপ-আলোচনা শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনের জন্য জাতীয় পরিষদই সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযুক্ত স্থান। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ৪ দফা দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ন্যাপ প্রধান বলেন, এ ব্যাপারে পূর্বেই আমি আমার অভিমত ব্যক্ত করেছি।
ন্যাপ সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে ২৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের পরিবর্তে ‘স্বাধীন পূর্ববাংলা দিবস’ পালনের জন্য দলীয় কর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখান থেকে আর পিছু হটা সম্ভব নয়। সুতরাং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত হবে শেখ মুজিবর রহমানের দাবিসমূহ মেনে নেওয়া।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালনের আহ্বান জানায়।
এদিন ‘খ’ জোনের সামরিক আইন প্রশাসক ২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় যে পরিস্থিতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয় তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ জারি করেন। ঘোষণায় আরও বলা হয় প্রধান বিচারপতি তদন্ত কমিশনের প্রধানকে মনোনয়ন দান করবেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী, পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস, পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস এবং ইপিআর থেকে সদস্য নিয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন এম এন এ অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খান “তমঘা-ই-কায়েদে আজম” এবং কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীন “তমঘা-ই-ইমতিয়াজ” খেতাব বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বাঙালীয়ানা/এসএল