১৯ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টাদশ দিনে ঢাকার অদূরস্থ জয়দেবপুরে জনতা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫০ জন নিহতএবং দুই শতাধিক আহত হবার খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। ঢাকা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ লাঠি-সোটা, বর্শা-বল্লম নিয়ে রাজপথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শ্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।
সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্যআইন জারি করা হয়।
এদিকে একদিন বিরতির পর সকালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড়ঘন্টা স্থায়ী ঐ বৈঠক শেষে শেখ মুজিব বলেন, ‘আমি সব সময়েই ভাল আশা করি তবে খারাপের জন্যেও তৈরী থাকি’।
জয়দেবপুরে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়’।
কি ঘটেছিল সেদিন
জয়দেবপুরে
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুইঘন্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ.আর কর্নেলিয়াস, জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।
ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই।
করাচীতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারী পার্টির নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ভূট্টো বিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণ আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তাঁর দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন- ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকবো না। তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানীদের শক্তি দেখতে পাবেন।
এদিন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) নেতা মিয়া মমতাজ দৌতলতানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুই নেতা মওলানা মুফতি মাহমুদ ও সরদার শওকত হায়াত খান ঢাকা এসে পৌঁছান।
বাঙালীয়ানা/এসএল