২১ জুন ১৯৭১ সোমবার
কি ঘটেছিল
বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, আমাদের এ সংগ্রাম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। বাঙালীর এই অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে প্রণীত হয়েছিল ৬-দফা কর্মসূচি। এই ৬-দফাই আমাদের মুক্তির একমাত্র সনদ।
সকালে একটি আরআর (রিকুয়েললেস রাইফেল) নিয়ে গেরিলারা কুমিল্লা বিমানবন্দর ও শহরের উপকণ্ঠের উপর গোলাবর্ষণ করে। ফলে পাকিস্তানী সেনারা আকস্মিক এ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে।
কুমিল্লার দক্ষিণে ৬ জনের একটি গেরিলাদল ২টি ইলেকট্রিক পাইলন ধ্বংস করে দেয়। ফলে নোয়াখালীর বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার বিজয়পুর ব্রিজের উপর পাকসেনাদের দুটি গাড়িকে এ্যামবুশ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত হয় ও গাড়ি দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।
ফেনী-নোয়াখালী সড়কে বোগাদিয়ায় নোয়াখালীর গেরিলা হেডকোয়ার্টার-এর একদল যোদ্ধা অ্যান্টি ট্যাংক মাইন ব্যবহার করে পাকবাহিনীর দুটি ট্রাককে অ্যামবুশ করে। এ অ্যামবুশে পাকবাহিনীর ট্রাক দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
নোয়াখালী-ফেনী সড়কের বজরায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের একটি টহলদার দলকে অ্যামবুশ করে। এতে ২ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।
হাবিলদার মতিন অতর্কিতে লক্ষ্মীপুরের কাছে দালালবাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে একজন মিলিশিয়াসহ ১৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে তাদের ক্যাম্প তছনছ করে দেয়।
হাবিলদার আজিরুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল ছাত্র গেরিলা শেওলা ঘাটের ৩ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে শেওলা-বড়িয়াগ্রাম সড়কের কড়াইদি চাঙ্গারপুল বিস্ফোরক লাগিয়ে উড়িয়ে দেয়।
আখাউড়া-সিলেট রেলপথে তেলিয়াপাড়ার কাছে মুক্তিবাহিনীর মনতলা অবস্থানে পাক হানাদারবাহিনী বেপরোয়া হামলা চালায়। ক্যাপ্টেন নাসিমের অবস্থানের উপর দুই ব্যাটালিয়ন, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুঁইয়ার অবস্থানের উপর পশ্চিম দিকে চান্দুরা থেকে এক ব্যাটালিয়ন ও লে. মোরশেদের অবস্থানের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুকুন্দপুর থেকে এক ব্যাটালিয়ন পাকসেনা হামলা চালায়। এ আক্রমণের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে পিছু হটে যায়।
‘সানডে টাইমস’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ঘাতকদের বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ম্যাসকারেনহাস বলেন, “পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গণহত্যার নীতি অনুসরণ করে চলছে।”
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান এক সফরে ঢাকা আসেন।
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম লাহোরে জামায়াত কর্মীদের এক সভায় বলেন, দেশকে খন্ড-বিখন্ড হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, বে-আইনী আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক গোলযোগ ১৮৫৭ সালে সঙ্ঘটিত বাংলার বিদ্রোহ-আন্দোলনের চেয়ে ১০ গুন শক্তিশালী ছিল।
ঢাকা সফররত চার সদস্যবিশিষ্ট বৃটিশ প্রতিনিধি দলের সদস্য জিল নাইট বলেন, “বৃটিশ পত্র-পত্রিকায় প্রতিনিয়ত পাকিস্তানের অত্যাচারের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে এ ধরণের কোনো ঘটনাই নেই।”
বাঙালীয়ানা/এসএল
অগ্নিঝরা একাত্তরের দিনগুলো, পড়ুন –
জুন ১৯৭১
মে ১৯৭১
এপ্রিল ১৯৭১
মার্চ ১৯৭১