২৪ জুন, ১৯৭১

Comments
২৪ জুন ১৯৭১ বৃহস্পতিবার
কি ঘটেছিল
  • বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে প্রেরিত এক তারবার্তায় পাকিস্তানে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার বার্তায় বলেন, “বাংলাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করছে। সরবরাহকৃত অস্ত্র এখানে গণহত্যার কাজেই ব্যবহৃত হবে।”
  • দামেস্কে (সিরিয়া) অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের দশম নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
  • ব্রিটিশ সরকারের একটি পার্লামেন্টারি দল বাংলাদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে জানার জন্য ঢাকায় এসে ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান করছিল। ২৪শে জুন সকাল সাড়ে ৭টায় প্রতিনিধিদল অখন হোটেলের লবিতে বসে বিমান বন্দরে যাবার অপেক্ষা করছিল ঠিক সেই সময়ে ৩ জন গেরিলা হোটেলের সামনে বারান্দায় দুটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়।
  • লে. মাহবুবের নেতৃত্বাধীন দুই প্লাটুন যোদ্ধা কুমিল্লার পূর্বে পাকবাহিনীর বিবিরবাজার অবস্থানে ঢুকে পড়ে এবং অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে পাক সেনাদের ২১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরে তালশহরে এদিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা তিতাস গ্যাসের সরবরাহ পাইপের ৪ ফুট অংশ উড়িয়ে দেয়। এর ফলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনগুলোতে তিতাস গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ফলে এসমস্ত পাওয়ার স্টেশনগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। 
  • মুক্তিবাহিনীর তিন প্লাটুন যোদ্ধা কুয়াপাইনা ও খৈনল এলাকা থেকে কসবার উত্তরে পাকবাহিনীর লাটুমুড়া অবস্থানের বামে ও দক্ষিণে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অভিযানে পাকসেনাদের ৯ জন নিহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়।
  • শালদা নদী অবস্থান ও কসবার টি আলীর বাড়ি এই দুদিক থেকে দুই কোম্পানি পাকসেনা এসে কায়েমপুরের নিকট মিলিত হয়। তারপর মর্টার, মেশিনগান ও কামানের সাহায্যে পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর মন্দভাগ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। দু’ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে এবং কায়েমপুর অবস্থান তুলে নিয়ে শালদা নদীর মূল ঘাঁটিতে চলে যায়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের ২৪ জন হতাহত হয়।
  • জলপাইগুড়ির ‘মুরতি’ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে ৬নং সেক্টরে রংপুর দিনাজপুরের থুকরাবাড়ি চাউলহাটি, সোনারহাট ও হেমকুমারী ইউনিট বেসে ৪টি দল ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রত্যেক দলের সদস্য সংখ্যা ৯০ জন। এখান থেকে শুরু করে তারা পরবর্তী গেরিলা যুদ্ধ যুদ্ধাভিযান।
  • মেক্সিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফের্টি জিল এবং বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার পরিষদের মহাসচিব ড. রিচার্ডো মলিনা মার্টি পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর গণহত্যা বন্ধের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্বশক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
  • সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন ও ইরানের শাহানশাহ রেজা শাহ পাহলভী বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নিজ নিজ সরকারের অভিমত ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বার্তা পাঠান।
  • ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেন, “বাংলাদেশের নিরস্ত্র ও অসহায় জনগণের ওপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিপীড়নের ফলে সেখানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ করলে কেবল বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি ঘটবে না, সেই সাথে গোটা উপমহাদেশের তথা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হবে।”

বাঙালীয়ানা/এসএল

অগ্নিঝরা একাত্তরের দিনগুলো, পড়ুন –

জুন ১৯৭১

মে ১৯৭১

এপ্রিল ১৯৭১

মার্চ ১৯৭১

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.