২৯ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
গত সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ আর মানুষ আর্তচিৎকার শোনা যায়।
সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কার্ফিউ তুলে নেয়া হয়।
শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবার চেষ্টারত মানুষের ঢল থামেনি।
শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী চেকপোষ্ট বসায়। পথচারীদের তল্লাশী ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে তৎপর দেখা যায়।
ঢাকা আরিচা সড়কে কল্যাণপুর ব্রিজের কাছে অবাঙালীদের তৎপরতা গত দুদিনে বেড়ে যায়। এ পথে যাতায়াতকারীদের আটক ও তল্লাশী করা হয়। কাউকে সন্দেহ হলে ব্রিজের নীচে নিয়ে জবাই করা হয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বিছিন্নভাবে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হতে থাকে।
এদিন মধ্যরাতের একটু পরে রাত দেড়টার দিকে পাকিস্তান আইনসভায় সর্বপ্রথম বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপনকারী আইনসভার সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে কুমিল্লার বাসা থেকে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে আর তার বড় ছেলে দীলিপ দত্তকে আর কখনো পাওয়া যায়নি।
স্বাধীন বাংলা বেতারে তিনবেলায় ৩টি অধিবেশন প্রচার হয়। চট্টগ্রাম শহর আর শহরতলীর মুক্তিকামী মানুষের বাতিঘরে রূপ নেয় এই বেতার।
এদিন বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহে সেকেন্ড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী অফিসার ও জওয়ানরা মেজর কে এম শফিউল্লাহর নেতৃতে এক সমাবেশে স্বাধীন বাংলার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে এবং দেশমাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ে জীবন বাজি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
এদিকে চট্টগ্রামের দক্ষিণ ও উত্তর থেকে বেলুচ রেজিমেন্ট ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অগ্রসরমান পাকসেনাদের শহরের খুব কাছে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা তাদের হামলা ও পাকিস্তানি নৌবাহিনীর গোলাবর্ষণের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে বাঙালীসেনা, ইপিআর, পুলিশ ও জনতা এক পর্যায়ে পিছু হটতে থাকে।
সন্ধ্যায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অজ্ঞাত স্থান থেকে হেলিকপ্টারে করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা এয়ারপোর্টে এনে দ্রুত একটি বিশেষ বিমান যোগে করাচীর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাঙালীয়ানা/এসএল