৩ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল
শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়।
পল্টনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা; গাঢ় সবুজের জমিনের উপর লাল সূর্য এবং লাল সূর্যের উপর বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র সংবলিত জাতীয় পতাকা; ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীত; গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি; ৫৬,০০০ বর্গমাইলের বাংলাদেশ; ইত্যাদি স্বাধীন বাংলাদেশের মুখ্য বিষয়গুলি এই ইশতেহারে উত্থাপন করা হয়।
সশস্ত্র বাহিনীর সব বাঙালী সেনা, ইপিআর পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার; শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয় এই ইশতেহারে। পল্টন ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ জনতা হাত তুলে এই ইশতেহার সমর্থন করেন।
পল্টনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশে উপস্থিত ছাত্রনেতারা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবার শপথ ঘোষণা করে।
“তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব”, “শেখ মুজিবের পথ ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা পূর্ব পাকিস্তান।

পল্টন ময়দানের সমাবেশে ছাত্র নেতারা শপথ গ্রহণ করছেন।
হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক ব্যক্তি নিহিত হয়। ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারী করা হয়।
রংপুরে পাক সেনাবাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে দুপুর আড়াইটা থেকে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কারফিউ জারী করা হয়। সিলেটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারী করা হয়। ঢাকায় কারফিউয়ের মেয়াদ শিথিল করে রাত ১০টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বলবৎ করা হয়।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় আগামী ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখান করেন।
বঙ্গবন্ধু জনাব ভুট্টোর উদ্দেশ্যে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করবো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলেটে আহতদের জীবন রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের উদাত্ত আহবান জানান। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলার স্বাধিকার বিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এ অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে।
বাঙালীয়ানা/এসএল