৪ অক্টোবর ১৯৭১ সোমবার
কী ঘটেছিল
বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বেশ কিছু সফল অভিযানের জন্য মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ৫ মাইল উত্তরে হরিসর্দার বাজারে পাক অবস্থানের উপর ১০৬ এমএম আরআর (রিকুয়েললেস রাইফেল) এবং ৮১ এমএম মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। এ আক্রমণে কয়েকটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং বেশ কয়েকজন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার হতাহত হয়।
৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী এক প্লাটুন পাকসেনার একটি দলকে কাকডাঙ্গার কাছে অ্যামবুশ করে। দু’পক্ষে প্রচন্ড গোলাবিনিময়ে ৬ জন পাকসেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একটি অ্যামবুশ দল পাকসেনাদের একটি দলকে সোনাবাড়িয়া-মান্দরা এলাকায় অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
গভীর রাতে নোয়াখালীর চিতলিয়া পাক ঘাঁটির কাছে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ভোরে যখন পাকসেনারা বাঙ্কার ছেড়ে বের হয়ে আসে তখন ৩” মর্টারসহ তাদের উপর আক্রমণ করে গেরিলারা। এতে বেশ কিছু পাকসেনা হতাহত হয় এবং তাদের একটি আরআর ধ্বংস হয়ে যায়।
বগুড়ার গাবতলী থানার মিহিরপুর গ্রামের কাছে বেশ কদিন আগেই রেললাইনে মাইন পেতে রাখে গেরিলারা। এদিন রাত ১১টায় পাকসেনাবাহী একটি ট্রেন ঐ স্থান অতিক্রমের সময় মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। বেশক’জন পাকসেনা ও প্রকৌশলী হতাহত হয়।
ঢাকায় বনানীস্থ নৌ-বাহিনীর সদর দফতরের কাছে গলফ্ স্কোয়ারে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের একটি দলকে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়।
গোপালগঞ্জ মহকুমার কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ৩০ জন সৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানীরা হেলিকপ্টারের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পুনরায় আক্রমণ চালায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
যশোরের বেনাপোলে পাকবাহিনীর সহযোগী ২ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
গভর্নর ডা. এ এম মালিকের সভাপতিত্বে পুনর্বাসন বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্যে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
মালিক মন্ত্রীসভার শিক্ষামন্ত্রী জামাত নেতা মাওলানা আব্বাস আলী খান এদিন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। পরে তিনি পাকিস্তান কাউন্সিল হলে শিশু কল্যাণ পরিষদ ও পাকিস্তান কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। এরপর তিনি ইসলামিক একাডেমী হলে শাহীন ফৌজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখে। শাহীন ফৌজের কর্মীদেরকে তিনি সাচ্চা পাকিস্তানী হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানায়। (‘শাহীন ফৌজ’ মূলত কিশোরদের নিয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনী যাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল। ঢাকা স্টেডিয়ামে ‘শাহীন ফৌজ’কে অস্ত্র কাঁধে কুচকাওয়াজে অংশ নিতেও দেখা যায় – সম্পাদক)।
জামাতে ইসলামীর মজলিসে শুরার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন গোলাম আযম। সভায় জামাতের জেলা প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ জেলার কর্মতৎপরতার রিপোর্ট পেশ করেন। সভায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মুক্তিফৌজের নাম ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার নিন্দা করা হয়।
ফেনী মহকুমা জামাতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা জামাত সেক্রেটারি মকবুল আহমদ। অধ্যাপক মুশফিকুর রহমান এ সভায় কর্মীদের সামনে দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। এ সভায় ইউনিয়নগুলোতে দলীয় কর্মীদের দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পিডিপি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে।
বাঙালীয়ানা/এসএল
অগ্নিঝরা একাত্তরের দিনগুলো, পড়ুন
অক্টোবর ১৯৭১
সেপ্টেম্বর ১৯৭১
আগস্ট ১৯৭১
জুলাই ১৯৭১
জুন ১৯৭১
মে ১৯৭১
এপ্রিল ১৯৭১
মার্চ ১৯৭১