৪ এপ্রিল, ১৯৭১

Comments

৪ এপ্রিল ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল

  • তাজউদ্দীন আহমদ নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। ওই সাক্ষাতের সময় সরকার গঠনের বিষয়ে জানতে চান ইন্দিরা গান্ধী। তিনি সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
  • ঢাকায় পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রধান নূরুল আমিনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধি দলের সদস্য – ফরিদ আহমদ, গোলাম আজম, খাজা খয়রুদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, মওলানা নুরুজ্জামান প্রমুখ জেনারেল টিক্কাকে পূর্ণ সমর্থন জানায় ও সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। তারা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়।
  • হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলোতে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা এক বৈঠকে মিলিত হন। দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়সহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ওই বৈঠকে।
  • এইদিনেই তেলিয়াপাড়া সভায় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ নিয়ে যৌথ কমান্ড “মুক্তিবাহিনী” গঠন করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এমএজি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে মনোনীত হন। ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্মকর্তাদের এই সভা থেকেই পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
  • তেলিয়াপাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানী (অব), আব্দুর রব এম.এন.এ, লে. কর্ণেল সালেহ উদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে এম সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর সাফায়েত জামিল, মেজর সি আর দত্ত, ক্যাপ্টেন মো. নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিন, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়া, লে. সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, লে. হেলাল মুর্শেদ খাঁন, লে. নাসির উদ্দিন, লে. মাহবুব, লে. আনিস, লে. সেলিম, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডে, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা আলী এম. এন. এ, মানিক চৌধুরী এম.এন.এ, মৌলানা আসাদ আলী এম.পি.এ, এনামূল হক মোস্তফা শহীদ এম. পি. এ, মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, দুলাল চৌধুরী, দেওয়ান আশ্রাফ আলী, ছাত্রনেতা কাজী কবির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী পাঠান, শাহ মো. মুসলিম, শফিকুল হোসাইন চৌধুরী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ড. আকবর আলী খান, এস. ডি. ও কাজী রকিব উদ্দিন, এস. ডি. ও মমতাজুর রহমান, মাহবুবুল হুদা ভূঁইয়া, আব্দুল ছাত্তার প্রমুখ।
  • পাকিস্তান বাহিনী ফেনী শহরের উপর বিমান আক্রমণ চালায়। হামলায় শহরের বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয় ও অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
  • ঠাকুরগাঁও ৯ নম্বর উইং-এর সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিন, ক্যাপ্টেন নজরুল, তৃতীয় বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আশরাফ, মেজর মকসুল হুসেন চৌধুরী, এএমসি’র অবসরপ্রাপ্ত মেজর টি হোসেন, সুবেদার মেজর ওসমান গণি প্রমুখের উপস্থিতিতে ভাতগাঁও সেতুর নিকট এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুবেদার এ মজিদ একটি কোম্পানি নিয়ে নীলফামারিতে, ক্যাপ্টেন আশরাফ তৃতীয় বেঙ্গলের একটি কোম্পানি, সুবেদার হাফিজ ইপিআর বাহিনীর দুটি কোম্পানি এবং হাবিলদার নাজিম দুটি এন্টি-ট্যাংক গান নিয়ে ভুষিরবন্দরে ডিফেন্স নেয়। নায়েব সুবেদার কায়সার ও হাবিলদার জায়দুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কোম্পানি বদরগঞ্জে ডিফেন্স নেয়। ক্যাপ্টেন আশরাফ সার্বিকভাবে ফিল্ড কমান্ডার মনোনীত হন।
  • পাকসেনাদের একটি রেজিমেন্ট বাঙালি দালালদের সহায়তায় রংপুরের হারাগাছ হয়ে তিস্তা নদী অতিক্রম করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে এবং হত্যা লুন্ঠন চালিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে।
  • রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘এ’ কোম্পানি কালুরঘাটে, ‘বি’ কোম্পানি রাজারহাটে, ‘ডি’ কোম্পানি সাপটিবাড়িবাজারে সুবেদার আরব আলীর কমান্ডে এবং ‘সি’ কোম্পানি বোরহানউদ্দিনের কমান্ডে কালিগঞ্জ থানা এলাকাতে ডিফেন্স নেয়। সার্বিক কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশউদ্দিন।
  • সিলেট শহরের টিবি হাসপাতালে অবস্থানরত পাকঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা এক বড় রকমের আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষে ব্যাপক ক্ষতি স্বীকার করে পাকবাহিনী ঘাঁটি ছেড়ে শালুটিকর বিমানবন্দরের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
  • ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে এক কোম্পানি নিয়মিত সৈনিকসহ ইপিআর সৈনিকেরা নরসিংদী এলাকায়, ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল-এর আলফা কোম্পানি মুজাহিদ সহযোগে আশুগঞ্জে, লেফটেন্যান্ট মোর্শেদের নেতৃত্বে এক প্লাটুন নিয়মিত সৈনিকসহ ইপিআর সৈন্যরা লালপুরে, ইপিআর ও মুজাহিদদের মিশ্রণে এক কোম্পানি একজন জেসিও (জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার) নিয়ন্ত্রণে আজবপুরে, ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিনের নেতৃত্বে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল-এর ডেল্টা কোম্পানির সাথে ইপিআর সৈন্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান নেয়।

(ফিচার ফটো হিসেবে ব্যবহৃত ছবিটি ২৬ জানুয়ারী ১৯৭২-এ তাজউদ্দীন আহমেদ এর নয়াদিল্লী সফরকালে তোলা। -সম্পাদক)

বাঙালীয়ানা/এসএল

অগ্নিঝরা এপ্রিলের দিনগুলো, পড়ুন –

এপ্রিল ১৯৭১

উত্তাল মার্চের দিনগুলো, পড়ুন –

মার্চ ১৯৭১

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.