৯ মার্চ, ১৯৭১

Comments

৯ মার্চ ১৯৭১ এ কি ঘটেছিল

  • মিছিল নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের মুহুর্মুহু মিছিল চলতে থাকে।
  • এদিন পূর্ব পাকিস্তানের কম্যুনিস্ট পার্টি স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। তাদের প্রচারপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ আজ গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে এখানে পৃথক ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কায়েম করিতে বদ্ধপরিকর।
  • ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এইদিন বিকেলে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ঘোষণা করেন, ইয়াহিয়া সাহেব অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে লাভ নেই। “লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন” নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা মেনে নাও। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মতো আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোন কিছু না করা হলে আমি মুজিবের সাথে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করবো।
  • ভাসানী শেখ মুজিবের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়ে বাংলার নায়ক হওয়া অনেক বেশি গৌরবের।
  • পল্টনে সেই বিশাল জনসভায় মজলুম জননেতা দৃঢ় কণ্ঠে আরও বলেন, ‘অচিরেই পূর্ব বাংলা স্বাধীন হবে।’ তিনি সবাইকে শেখ মুজিবের ওপর আস্থা রাখতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব আমার ছেলের মতো, সে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না; বাঙালীরা মুজিবের ওপর আস্থা রাখেন, কারণ আমি তাকে ভালোভাবে চিনি।’ এই দিন তিনি তার ভাষণের সঙ্গে ১৪ দফা দাবিও পেশ করেন।
  • আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়-সহ সারাদেশে সকল সরকারি ও আধাসরকারী অফিস, হাইকোর্ট ও জেলাকোর্ট প্রভৃতিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। শেখ মুজিব যেসব সরকারি অফিস খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কেবল সেসব অফিস চালু থাকে।
  • এ দিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী। তিনি অসুস্থতার অজুহাত দিলেও এ অস্বীকৃতি প্রকারান্তরে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন বলেই মনে করা হয়।
  • গভীর রাতে ইসলামাবাদ লে. জেনারেল টিক্কা খানকে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসক নিয়োগের নির্দেশ জারি করে।
  • জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাঁদের পরিবারবর্গকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকাস্থ জাতিসংঘের উপ আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দফতর পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তার দেশের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিম জার্মান সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সামরিক বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
  • সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ’ এর ছাত্রসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
  • সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘন্টার জন্য কারফিউ জারি করেন। রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন নৈশ কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। এই সান্ধ্য আইন জারি জনসাধারণের জন্য উস্কানি ছাড়া আর কিছু নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
  • এদিন পাকিস্তানীজান্তা নিয়ন্ত্রিত বাংলা সংবাদপত্র ‘দৈনিক পাকিস্তান’ সম্পাদকীয়তে লেখে, “নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই সংকটমুক্তির একমাত্র পথ”।
  • সকালে পিআইএ-র বাঙালী কর্মচারীরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলে তিনি তাদের সাথে দেখা করেন।
  • প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পাকিস্তান সফরের ঘোষণা দেয়া হয় এই দিন।
  • হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন জোরেশোরে পালনরত চট্টগ্রামবাসীর সাথে অবাঙালীরা রেলওয়ে কলোনী ও এ.কে.খান রোডে দুপুরের দিকে  সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিকেলে হালিশহর হতে দেওয়ান হাট হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত অবাঙালীরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শোডাউন করে। পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছিল।
  • অন্যদিকে চট্টেশ্বরী রোডে ‘চট্টগ্রাম শিল্প-সাহিত্য পরিষদ’-এর অফিসে গণসঙ্গীতের মহড়া শুরু হয়।

বাঙালীয়ানা/এসএল

উত্তাল মার্চের আর সব দিনগুলো:
পড়ুন –

১ মার্চ ১৯৭১২ মার্চ ১৯৭১৩ মার্চ ১৯৭১৪ মার্চ, ১৯৭১৫ মার্চ, ১৯৭১
৬ মার্চ, ১৯৭১৭ মার্চ, ১৯৭১৮ মার্চ, ১৯৭১৯ মার্চ, ১৯৭১১০ মার্চ, ১৯৭১
১১ মার্চ, ১৯৭১১২ মার্চ, ১৯৭১১৩ মার্চ, ১৯৭১১৪ মার্চ, ১৯৭১১৫ মার্চ, ১৯৭১
১৬ মার্চ, ১৯৭১১৭ মার্চ, ১৯৭১১৮ মার্চ, ১৯৭১১৯ মার্চ, ১৯৭১২০ মার্চ, ১৯৭১
২১ মার্চ, ১৯৭১২২ মার্চ, ১৯৭১২৩ মার্চ, ১৯৭১২৪ মার্চ, ১৯৭১২৫ মার্চ, ১৯৭১
২৬ মার্চ, ১৯৭১২৭ মার্চ, ১৯৭১২৮ মার্চ, ১৯৭১২৯ মার্চ, ১৯৭১৩০ মার্চ, ১৯৭১
৩১ মার্চ, ১৯৭১

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.