বীরপ্রতীক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল মতিন

Comments

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ আবদুল মতিনের পৈতৃক বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল গনি এবং মায়ের নাম রওশন আরা বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম শওকত আরা বেগম। তাঁদের এক মেয়ে।

 

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে পৈতৃক বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ময়মনসিংহে সমবেত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে ৩ নম্বর সেক্টরের সিমনা সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘এস’ ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো (বি) কোম্পানির অধিনায়ক নিযুক্ত হন। মোহাম্মদ আবদুল মতিন স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ২০০৮-০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সিলেটমুখী সড়কের ১৮ মাইল পরই মাধবপুর। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। মাধবপুর এলাকার দুই পাশে তিতাস নদী ও সোনাই নদী। এর পূর্ব পাশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পতন হলে কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন মাধবপুরে। তাঁর দলে ছিলেন আবদুল মতিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখলের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২১ এপ্রিল শাহবাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শাহবাজপুর দখল করলেও মোহাম্মদ আবদুল মতিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের যথেষ্ট দেরি করিয়ে দিতে সক্ষম হন। আবদুল মতিন যখন বুঝতে পারেন যে তাঁদের পক্ষে আর প্রতিরক্ষা অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়, তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণ করেন। ২৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবদুল মতিনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রাথমিক আক্রমণের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল দুপুর ১২টার মধ্যে মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরক্ষার সামনে পৌঁছে যায়। প্রথমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সেনা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। বাঁ পাশের দল মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দক্ষিণ ভাগের অবস্থানে আক্রমণ করে এবং দ্বিতীয় দল মুক্তিবাহিনীর দুই প্রতিরক্ষার মাঝ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তৃতীয় দল মুক্তিবাহিনীর অপর প্রতিরক্ষায় আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম (বীর বিক্রম)। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়ন এসে যুদ্ধে যোগ দেয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। সংকটময় এমন মুহূর্তে মোহাম্মদ আবদুল মতিন বিচলিত হননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি আক্রমণের যথোপযুক্ত জবাব দেন।

 

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া

মন্তব্য করুন (Comments)

comments

Share.

About Author

বাঙালীয়ানা স্টাফ করসপন্ডেন্ট