সারা বিশ্ব তোলপাড় করে যে ঢেউ বাংলাদেশে এসে লেগেছে তার ধাক্কায় ধীরে ধীরে মুখোশ খুলে যাচ্ছে অনেকেরই। মৃদু বাতাসে ভর করে এ যে ঝোড়ো হাওয়ার রূপ নেবে তা মনে হয় কারও রক্ত চক্ষুকে পরোয়া করবে না। #MeToo -র এই বাতাসে খুলে যাওয়া জানালায় সম্প্রতি মুক্ত বাতাসে যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করেছেন আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশী মাকসুদা আখতার প্রিয়তি। দুসন্তানের জননী ২৯ বছর বয়সী প্রিয়তি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করা প্রিয়তি পেশায় একজন পাইলট। তবে তার নেশা মডেলিং ও অভিনয়।
২০১৪ সালে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মিস আয়ারল্যান্ড প্রতিযোগিতায় সেরার মুকুটজয়ী প্রিয়তি স্বদেশে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নেন। এই বিজ্ঞাপন সূত্রেই তিনি রঙধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক নামে এক ব্যবসায়ীর অফিসে গেলে এই রফিক তাকে ধর্ষণে উদ্যত হয় বলে প্রিয়তি অভিযোগ করেন গত ৩০ অক্টোবর ফেইসবুক লাইভে এসে। রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এই রফিকুল ইসলাম আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ভিডিও লাইভের আগে ফেসবুকে এক পোষ্টে ওই ব্যক্তিকে প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী উল্লেখ করে প্রিয়তি লিখেছেন, ‘লোকটির নাম রফিকুল ইসলাম… এই পোস্টের পর হয়তো আমার নামে মানহানির মামলা হবে, না হয় বলবে অসৎ উদ্দেশ্য আছে আমার… ইত্যাদি ইত্যাদি।’
২০১৫ সালে রফিকুলের কোম্পানির একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর নিজের পারিশ্রমিক আনতে গিয়েছিলেন প্রিয়তি। সেই সময় রফিকুলের অফিসেই তাঁর যৌন নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রিয়তি লিখেছেন, ‘এই লোকটি তার অফিসে হঠাৎ করে টেবিল থেকে উঠে এসে আমার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে… ২০১৫ সালের মে মাসে তাদের প্রোডাক্ট প্রমেক্স এর বিজ্ঞাপন এর পেমেন্ট আনতে গিয়ে (এই পেমেন্ট যদিও আমি পাইনি)। আমি চিৎকার করে কান্না করেছিলাম এই অপমান সহ্য করতে না পেরে, কিন্তু আমরা পুরোপুরি নিরুপায় ছিলাম তাদের ক্ষমতার কাছে। আমি কিন্তু তখন কারেন্ট মিস আয়ারল্যান্ড ছিলাম।’ এরপর প্রিয়তি তার ভিডিও লাইভে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সোশাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠায় এই অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন রঙধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। রফিকুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো একটা নাটক। বলার অপেক্ষা রাখে না। ও থাকে আয়ারল্যান্ডে।” প্রিয়তিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এসে বলেন, প্রমাণাদি দেন।”
অবশ্য প্রিয়তি লাইভে এমন আশংকার কথা বলেছিলেন, “সবাই বলবে এত দিন পরে কেন? মি টু মুভমেন্টের আগেও আমি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আমি কারও নাম নিতে পারিনি। এটা নিয়ে কথা বলতে পারি নাই। সাহস হচ্ছিল না। আজকে এত দিন পর কিভাবে সাহস হয়েছে, আমি নিজেও জানি না।” এবিষয়ে প্রশংসার পাশাপাশি নিন্দার সম্মুখীনও যে হতে হবে, প্রিয়তি নিজেই তা বলেছেন। “আমার চরিত্র নিয়ে গবেষণা হবে, পোস্টমর্টেম হবে। বলবে ভাইরাল হওয়ার জন্য করেছি। তাহলে বলবটা কখন? ভাইরাল হওয়ার জন্য ব্লেম নিতে হয়? তাহলে মেয়েরা বলবেটা কখন?”
হাওয়া বদলের এই হাওয়ায় অভিনয় শিল্পী ফারিয়া, বাঁধন, প্রিয়তির পরে শুচিস্মিতা সিমন্তিও মুখ খুলেছেন। আরও অনেকেই হয়তো মুখ খুলবেন, খশে পড়বে অনেক মুখোশ আর মুখ লুকোতে মিথ্যার আশ্রয় নেবে অভিযুক্তরা।
বাঙালীয়ানা/জেএইচ